বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে তার অবসরে অলস দিন কাটানোর কথা। কিন্তু বেকার বসে থাকার “সুযোগটা” একদমই মনে ধরেনি তার। তাই কাজে নামলেন নতুন (এবং ভিন্নধর্মী) এক প্রকল্প নিয়ে। শুরুতে লোকে বললো ‘পাগল’! তবে ধারণা পাল্টাতে সময়ও খুব বেশি লাগেনি। ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনার উদ্ভাবনী এই মানুষটির নাম মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী প্রকাশ নেভী হারুন। এলাকায় যার পরিচয় “ঘাসের রাজা হারুন ভাই”।
সম্প্রতি ফিশারিজ, নার্সারি, হর্টিকালচার, বীজ উৎপাদনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, ওষুধ কোম্পানিসহ ৭টি ক্যাটাগরীতে ৩৭১ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে দেশের শ্রেষ্ঠ খামারীর পুরস্কার জিতেছেন কর্ণফুলীর মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী প্রকাশ নেভী হারুন।
হারুন ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে ওই বছরই এলাকায় ডেইরী ফার্ম ও গরুর ঘাস উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। কর্ণফুলী উপজেলায় নিজ গ্রাম কলেজ বাজারে শাহনাজ ডেইরী ফার্ম নামে একটি ডেইরী খামারের মাধ্যমে তার এই ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া। এছাড়া ওই খামারের গোবর দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার ও জ্বালানি গ্যাস উৎপাদন এবং ২০ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করে আসছেন তিনি। তাঁর ডেইরী খামারে বর্তমানে ছোট-বড় ৭০টি উন্নত জাতের গরু রয়েছে বলে জানান হারুন। শুরুর দিকে এলাকার অনেকে তাঁকে পাগল বলে নিরুৎসাহিত করতে চাইলেও পিছপা হননি তিনি। এলাকার মানুষের ধারণা ভুল প্রমাণিত করে তিনি ঘাস চাষ ও ডেইরী শিল্পে দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক’ও ‘ফার্মার অব দি ইয়ার’পদক পেয়ে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক জমকালো অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল উপস্থিত থেকে মো. হারুনের হাতে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক এগ্রো অ্যাওয়ার্ড ‘ফার্মার অব দি ইয়ার’পুরস্কারটি তুলে দেন। এসময় তার হাতে সার্টিফিকেট, সম্মাননা ক্রেস্ট ও ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়।
জয়নিউজের সাথে কথোপকথনে হারুন জানান, একসময় কর্ণফুলীতে ৬শ’ থেকে ৭শ’ লিটার দুধ উৎপাদন হতো। তার দেখানো পথে বর্তমানে এ এলাকায় ছোট বড় ৬শ’ ডেইরী ফার্ম গড়ে উঠেছে এবং এসব ডেইরী ফার্ম থেকে গড়ে ৬০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত এসব দুধের ৭০% ক্রয় করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বড় বড় ও স্বনামধন্য মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। মিল্ক ভিটা প্রতিদিন ৬-৭ হাজার লিটার দুধ নিয়ে যায় এ এলাকা থেকেই।
জয়নিউজ/জুলফিকার