প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের জীবন সর্বাগ্রে। বেঁচে থাকলে আবার সবকিছু গুছিয়ে নেওয়া যাবে। তাই অসুবিধা হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি লকডাউনে ঘরে বসে বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ উদযাপনের আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নববর্ষ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসময়ে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছার পাশাপাশি সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে পবিত্র মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বিটিভিসহ বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
আগামীকাল শুরু হওয়া লকডাউনের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত সপ্তাহে দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল আকার ধারণ করলে মানুষের চলাচলের ওপর কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হয়। আপনারা দেখেছেন, কোনোভাবেই সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তাই আমাদের আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। আমি জানি, এর ফলে অনেকেরই জীবন-জীবিকায় অসুবিধা হবে। কিন্তু আমাদের সবাইকেই মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবন সর্বাগ্রে। বেঁচে থাকলে আবার সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গত বছর করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর নানাবিধ বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে। এই মহামারি প্রতিরোধে যেহেতু মানুষের সঙ্গনিরোধ অন্যতম উপায়, সে জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। যার ফলে মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব পড়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর একটানা ৬২ দিন সাধারণ ছুটি বলবৎ ছিল। এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলেনি। বিদেশের সঙ্গে চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এই অবস্থা শুধু দেশে নয়, বিশ্বের যেখানেই এই মরণঘাতী ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে, সেখানেই এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।
নববর্ষ উদযাপনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত বছরের মতো এ বছরও আমরা বাইরে কোনো অনুষ্ঠান করতে পারছি না। কারণ, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নতুন করে আঘাত হেনেছে সারা দেশে।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের করোনাভাইরাস আরও মরণঘাতী হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। পয়লা বৈশাখের আনন্দ তাই গত বছরের মতো এবারও ঘরে বসেই উপভোগ করব আমরা।’
প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, যুগে যুগে মহামারি আসে। আসে নানা ঝড়ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ-দুর্বিপাক। এসব মোকাবিলা করেই মানবজাতিকে টিকে থাকতে হয়। জীবনের চলার পথ মসৃণ নয়। তবে পথ যত কঠিনই হোক, আমাদের তা জয় করে এগিয়ে যেতে হবে।
জীবন-জীবিকা চালু রাখতে হবে
করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও মানুষের জীবন-জীবিকা যাতে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে না পড়ে, সেদিকে সরকার কঠোর দৃষ্টি রাখছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় গত বছর যে চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা পুনরুল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই চার মূলনীতির ভিত্তিতে কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। কলকারখানায় যাতে উৎপাদন ব্যাহত না হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নেওয়া হয়েছে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ।
দিনমজুর, পরিবহনশ্রমিক, হকার, রিকশাচালক, দোকান কর্মচারী, স্কুলশিক্ষক ও মাদ্রাসাশিক্ষক, শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিন, অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সেবাদানকারী, সাংবাদিকসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ সময় প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে বিভিন্ন সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে।
ভ্যাকসিন নিলেও সতর্ক থাকতে হবে
টিকাদান কর্মসূচির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য টিকা উৎপাদনের শুরুতেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকার ডোজ আমরা নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। ইতোমধ্যে ৫৬ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। যাঁরা প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমাদের সে প্রস্তুতি রয়েছে।’
তবে টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, টিকা দিলেই একজন সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হবেন—এমন নিশ্চয়তা নেই বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। কাজেই টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।