স্বাগতিক ওমানকে ২৬ রানে হারিয়ে স্বস্তি ফিরেছে বাংলাদেশ শিবিরে। ব্যাট-বলের দারুণ লড়াইয়ে টাইগাররা স্বাগতিকদের হারালেও এখনও মিশন আনফিনিশড। সুপার টুয়েলভ বা মূল পর্বে খেলতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে জিততে হবে। পাশাপাশি ওমানের আরেকটি হারের প্রার্থনা করতে হবে।
ওমান শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে হারলে এবং বাংলাদেশ পাপুয়া নিউ গিনিকে হারালে সহজেই বাংলাদেশ সুপার টুয়েলভে যাবে। আর যদি ওমান ও বাংলাদেশ দুই দলই জিতে যায় তাহলে স্কটল্যান্ড, বাংলাদেশ ও ওমানের রান রেট হিসেবে আসবে। তখন শীর্ষ দুই দল যাবে সুপার টুয়েলভে।
সুপার টুয়েলভের টিকিট পেতে বাঁচা-মরার ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে আজ জিততেই হতো বাংলাদেশ দলকে। আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১৫৩ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা। সে লক্ষ্য টপকাতে নেমে উড়ন্ত শুরু ওমানের। তাসকিন আহমেদের করা প্রথম ওভার থেকেই তুলে নেয় ১২ রান।
দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার আকিব ইলিয়াসকে ৬ রানে ফেরান মুস্তাফিজ। এরপর টাইগার বোলারদের উপর আরো আগ্রাসী ওমানের ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজের করা প্রথম বলটি উড়িয়ে বাউন্ডারির বাইরে মারতে চেয়েছিলেন যতিন্দর, তবে ব্যাটে-বলে ভালো সংযোগ হয়নি। সেটি দৌড়ে এসে তালুবন্দি করার চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু বলটি ফসকে হাত থেকে মাটিতে পড়ে যায়।
২ বল পরেই কাশাপ প্রজাপতিকে তুলে নেন মুস্তাফিজ। ২১ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন এই ব্যাটসম্যান। ইনিংসের ১২তম ওভারে অধিনায়ক জিসান ১২ রান করে আউট হলে খানিক চাপে পড়ে ওমান। একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখা যতিন্দর ফেরেন এর পরেই। সাকিবের বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন ৩৩ বলে ৪০ রান করে।
১৩তম ওভারে দলীয় ৯০ রানে যতিন্দর আউট হলে খেলায় ফেরে বাংলাদেশ দল। এরপর সন্দ্বীপ গৌড় ৮ বলে ৩ রান করে আউট হন সাইফউদ্দিনের বলে। ৯ রানে থাকা আয়ান খান ও ৪ রানে মোহাম্মদ নাসিমকে ফেরান সাকিব। পরপর দুই বলে দুটি ক্যাচই নেন মাহমুদউল্লাহ। ততক্ষণে ম্যাচ বাংলাদেশ দলের পকেটে। ইনিংসের ১৮তম ওভার করতে এসে কলিমউল্লাহ আর ফায়াজ খানকে আউট করেন সাইফউদ্দিন।
পরে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ওমানের সংগ্রহ থামে ১২৭ রানে এতে ২৬ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ৪টি ও সাকিব নেন ৩ উইকেট।
এই জয়ে এখনো সুপার টুয়েলভে যাওয়ার আশা বেঁচে থাকল বাংলাদশের। প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে যদি জয় পায় স্কটল্যান্ড আর বাংলাদেশ যদি হারাতে পারে পাপুয়া নিউ গিনিকে তবে কোন হিসাব-নিকেশ ছাড়াই সুপার টুয়েলভে যাবে বাংলাদেশ দল।
এর আগে টস জিতে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নামা দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখের ব্যাটিংয়ের কৌশল ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। প্রথম ২ ওভারে ৮টি বলই ডট দেন। ব্যাট হাতে তুলতে পারলেন ৬ রান। ব্যক্তিগত ৪ রানে জীবন পান লিটন, তার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন কাশাপ। কিন্তু সাজঘরে ফেরার বোধহয় তাড়া ছিল লিটনের। পরেই বলেই আউট হলেন ৪ রান করে।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ পাননি নাঈম। আজ ফেরেন সৌম্য সরকারের পরিবর্তে। তার ফেরা বিবর্ণ হতো, যদি না ব্যক্তিগত ১৭ ও ২৬ রানের মাথায় ওমানের ফিল্ডাররা সহজ দুটি ক্যাচ ছাড়তেন। তখনও রানের থেকে বল বেশি খেলে ফেলেছিলেন নাঈম। শেখ মেহেদীকে ৩ নম্বরে খেলায় ম্যানেজমেন্ট। আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। ফায়াজ বাটকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শূন্য হাতে। দলীয় ২১ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে তুলতে পারে ২৯ রান।
সাকিব আল হাসান ৪ নম্বরে নেমে নাঈমের সঙ্গে বড় জুটি গড়েন দলকে বিপদমুক্ত করেন। দুজনেই ছুটছিলেন অর্ধশতকের দিকে। কিন্তু ৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে সাকিব রান আউটের শিকার হন। ফেরেন ৪২ রানের ইনিংস খেলে। ২৯ বলের ইনিংসটি সাজান ৬টি চারের মারে। সাকিব না পারলেও ধীরগতির ব্যাটিংয়ে অর্ধশতক তুলে নেন নাঈম। তার ফিফটি আসে ৪৩ বলে।
ব্যাটিং অর্ডারে এগিয়ে আসা নুরুল হাসান সোহান সুবিধা করতে পারেননি একেবারেই। জেসান মাকসুদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ৩ রান করে। আফিফ হোসেনও ব্যর্থ এদিন। ৫ বল খেলে ১ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। তৃতীয়বার যখন ক্যাচ তুললেন নাঈম, সেবার আর সুযোগ মেলেনি। থেমে যায় তার ৬৪ রানের ইনিংস। ৫০ বলে খেলে ৩টি চার ও ৪টি ছয় মারেন এই বাঁহাতি তরুণ।
৮ নম্বরে ব্যাট করতে নামা মুশফিকুর রহিম এ ম্যাচেও ব্যর্থ। উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন ৬ রান করে। পরের বলেই বিদায় নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। শেষদিকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১০ বলে ১৭ রানের ইনিংসের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভারের শেষ বলে অলআউগ হওয়া টাইগারদের ইনিংস থামে ১৫৩ রানে। ওমানের হয়ে বিলাল খান ও ফাইয়াজ বাট সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নেন।