টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা শেষ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের। শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতল ৩ রানে। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ক্রিস গেইলরা বাঁচিয়ে রাখল সেমির আশা।
এদিন দুপুরের প্রচণ্ড গরমে টস ভাগ্যটা থাকল বাংলাদেশের পক্ষে। এ নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচের ৫টিতেই টস জিতলেন মাহমুদউল্লাহ। এবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রথমে বল হাতে নেন তিনি। ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাব দিতে নেমে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান তুলে শুধু শেষ ওভারে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা উপহার দিল বাংলাদেশ, জেতা আর হলো না।
শারজাহ’র উইকেটে ১৪২ চ্যালেঞ্জিং স্কোর। সেই সংগ্রহটাকে টপকাতে গিয়ে প্রায় পুরোটা সময়ই দাপট ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মুশফিকুর রহিমের বাজে শট খেলে আউট শেষটাতে এসে সমীকরণ বেশ কঠিন করে দেয়। জিততে হলে শেষ ওভারে এসে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১৩ রান। কিন্তু দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হিসাব মেলাতে পারলেন না। একটুর জন্য তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের।
মন্থর উইকেটে উইন্ডিজের ছুড়ে দেওয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওপেনিংয়ে ছিল চমক। তবে শুরুতে নেমে চমক দেখাতে পারলেন কোথায় সাকিব আল হাসান? ১২ বলে ৯ রান করে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন ওপেনার বনে যাওয়া এই তারকা ক্রিকেটার। ইতিহাস জানাচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটে ৪০৩ ইনিংসে এবারই প্রথম ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলেন সাকিব।
অন্য প্রান্তে থাকা নাঈম শেখ এই ম্যাচেও ইনিংসটা বড় করার সুযোগ পেয়েছিলেন, ব্যক্তিগত ১১ রানে জীবনও পেয়েছিলেন তিনি। আন্দ্রে রাসেলের বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মিড উইকেটে। যদিও ফিল্ডার হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র হাতে জমাতে পারেননি। কিন্তু জেসন হোল্ডারের বলে সর্বনাশ তার। ১৯ বলে ১৭ রান করে ফিরে যান নাঈম।
পাওয়ার প্লেতে সেই একই বাংলাদেশের দেখা মিলল। রান উঠছেই না। তবে এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজও ছিল ব্যর্থ। দুই দলেরই পাওয়ার প্লেতে রান ২ উইকেটে ২৯। এরপর জুটি বাঁধেন সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। এই জুটি সম্ভাবনা জাগিয়ে চুপসে যায়। আকিল হোসেনের বলে ক্রিস গেইলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে ১৭।
এরপর এক প্রান্তে লড়ে গেছেন দুঃসময়ে ঘুরপাক খেতে থাকা লিটন কুমার দাস। এছাড়া উপায়ও যেন ছিল না তার। সমালোচনার চাপে পিষ্ট এই ব্যাটসম্যান একাদশে যে জায়গা পেয়েছেন সেটাই বড় কথা। এই ম্যাচে কিছু একটা করতে না পারলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটাই তো ছিল শঙ্কার মুখে! তিনি খেললেও অন্য প্রান্তে স্রেফ আত্মহত্যা করেন মুশফিকুর রহিম! যখন বলে বলে রান হলেই অনেকটা হয়ে যেত, তখন রবি রামপালের নিচু হয়ে আসা বলে স্কুপ করতে যান তিনি। ঠিকঠাক হলো না, ভেঙে গেল উইকেট (৭ বলে ৮)। এই আউটটা মনের আয়নায় না হোক, রিপ্লেতে দেখলে নিশ্চিত লজ্জা পাবেন মুশি! এর কোনো মানে ছিল না!
তার বিদায়ের পরও চেষ্টা চালিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ আর লিটন। ধীরগতির ইনিংসে দলের ওপর চাপ বেড়েছে, শেষ দিকে সেটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন লিটন, কিন্তু লাভ হয়নি। ১৯তম ওভারে ছক্কা মারতে গিয়ে উইকেট হারান তিনি, ফেরেন ৪৩ বলে ৪৪ রান করে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। সেটা আর শেষমেশ নেওয়া সম্ভব হয়নি মাহমুদউল্লাহ ও আফিফের পক্ষে। দুজনেই অপরাজিত ছিলেন যথাক্রমে ৩১ আর ২ রান করে। তিন রানের আক্ষেপে পুড়ল বাংলাদেশ।
অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহটা হতে পারত আরও কম। এই ম্যাচেও টপাটপ ক্যাচ ফেললেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। ১ রানে জীবন পাওয়ার পর শেষ ওভারে দুই ছক্কা হাঁকালেন জেসন হোল্ডার। শেষ অব্দি অপরাজিত ছিলেন ৫ বলে ১৫ রানে।
সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিংও শেষে এলোমেলো হয়ে গেলো। তার করা ইনিংসের শেষ ওভারে তিন ছক্কায় ১৯ রান নিয়ে পুঁজিটাকে চ্যালেঞ্জিং করতে পারে উইন্ডিজ। ২২ বলে ৪০ রান করেন নিকোলাস পুরান। শেষ ৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ৭২ রান। অথচ শারজাহর স্লো উইকেটে প্রথম ১৫ ওভারে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা হাঁকাতে পারেনি কোন ছক্কা!
এই মাঠে কিছুদিন আগেই আইপিএলের ম্যাচ খেলা মুস্তাফিজকে অচেনাই মনে হলো। দুটি উইকেট পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ৪৩ রান দিলেন ৪ ওভারে। দলে জায়গা পেয়ে পেসার শরিফুল ইসলাম চেনালেন নিজেকে। ৪ ওভারে ২০ রানে নেন ২ উইকেট।
একাদশে ফেরা তাসকিন আহমেদ উইকেট না পেলেও নিয়ন্ত্রণ রাখেন নিজের হাতে। ৪-০-১৭-০! টি-টোয়েন্টিতে নিঃসন্দেহে দারুণ ফিগার। আর সাকিব আল হাসান ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে নিতে পারেননি কোনো উইকেট।
ব্যাটেও ব্যর্থ দলের সেরা এই ক্রিকেটার। চমক দিয়ে ওপেনার হিসেবে নামলেও কিছুই করা হয়নি। বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ অভিযানটাও কোথায় গিয়ে থামে কে জানে? এখনো সামনে আছে দুই ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতলেও তেমন কোনো লাভ নেই। শুধু সমালোচনার তোপ থেকে হয়তো একটু বাঁচা যাবে।