আবারও দেশে করোনা সংক্রমণ তীব্র গতিতে বাড়ছে। তাই নতুন করে আক্রান্তদের চিকিৎসায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে আরও ২০ হাজার শয্যা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সারাদেশে আক্রান্ত ছিল আড়াই হাজার, আজ হয়েছে তিন হাজার। সংক্রমণ খুব দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বিসিপিএস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে অনেক হাসপাতালে শয্যা খালি থাকলেও আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। সব হাসপাতাল রোগীতে ভরে যেতে শুরু করবে।
জাহিদ মালেক বলেন, দেশে মঙ্গলবার শনাক্তের হার ছিল ৯ শতাংশে, আজ সেটা ১১ শতাংশে উঠেছে। গত ১০-১৫ দিন আগেও শনাক্ত রোগী দিনে দুই থেকে আড়াইশ জন ছিল, বর্তমানে সেটি তিন হাজারের কাছাকাছি।
তিনি আরও বলেন, এক সপ্তাহ আগেও হাসপাতালগুলোতে গড়ে আড়াইশর মতো রোগী ছিল, যা এখন হাজারে পৌঁছেছে। রোগীর এই সংখ্যা আরও বাড়বে। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। চিকিৎসকদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হবে। এটা ঘটা শুরু হলে স্বাস্থ্য খাতকে বেকায়দায় পড়তে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের পরিস্থিতি যেন আমেরিকা ও ইউরোপের মত না হয়। আর সেজন্য ১১ দফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যা আগামীকাল থেকে কার্যকর করা হবে।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগামীতার মধ্যেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা সরকারকে সব ধরনের জনসমাগম ও সভা-সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছি। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো শুধু পরামর্শ আর নির্দেশনাই দিতে পারে, এর বেশি কিছু করার সুযোগ নেই।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন অথবা করোনার সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে গেলেও দেশে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি হবে না।
আজ দুপুরে দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে সংক্রমণ পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, অক্সিজেনের যে মজুদ আমরা রেখেছি, সামনে ওমিক্রন অথবা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়ে হাসপাতালে অনেক বেশি রোগী আসলেও আমরা আশা করছি, অক্সিজেনের খুব একটা সমস্যা হবে না।
রোবেদ আমিন বলেন, দেশের বিভাগীয় শহরে আমাদের যে সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, সেগুলোর জন্য অনেক বেশি অক্সিজেন সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়। এই বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দিয়েছি। এইগুলোতে প্রায় ১১৮টি অক্সিজেন সেন্ট্রাল লাইন করা হয়েছে। আমাদের প্রায় ২৯ হাজারের মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। এছাড়াও হাইফ্লোনাজাল ক্যানুলা, যেটি করোনা আক্রান্ত রোগীদের অধিক বেশি প্রয়োজন হতে পারে সেগুলো প্রায় দুই হাজার করে আছে। প্রায় আড়াই হাজারের কাছাকাছি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আমাদের বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ মুখপাত্র আরও বলেন, বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যানে ঢাকা বিভাগ এগিয়ে আছে। দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৪৩.৬৮ শতাংশ মৃত্যু শুধু ঢাকাতেই হচ্ছে। তার পরে চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ শতাংশের মতো মৃত্যু হচ্ছে। এরপর খুলনায় ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭.৩৫ শতাংশ, বরিশালে ৩.৩৮ শতাংশ এবং ময়মনসিংহের সবচেয়ে কম ৩.০২ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে।