ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রভাবে গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এক তৃতীয়াংশ। তার ওপর রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তেলের দাম উঠে গেছে ১৩০ ডলারের আশপাশে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে এখনো সায় দেয়নি তার মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলো। তারা এই নিষেধাজ্ঞায় সায় দিলে তেলের দাম রাতারাতি পৌঁছাতে পারে ২০০ ডলারের ওপরে। যার প্রভাবে সংকটে পড়বে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলোও যদি এই নিষেধাজ্ঞায় শামিল হয় তবে প্রতি ব্যারেল ২০০ ডলার অতিক্রম করবে তেলের দাম। এর প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে পারবে না ইউরোপসহ বাকি বিশ্ব।
বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই যেন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় সায় দিচ্ছে না ফ্রান্স-জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। তেলের দাম ২০০ ডলার ছাড়িয়ে গেলে পুরোপুরি তেল ও গ্যাস আমদানিনির্ভর ইউরোপে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাবে রেকর্ড পরিমাণে। দেখা দেবে অর্থনৈতিক মন্দা। ইউরোপের গ্যাসের চাহিদার ৯০ শতাংশ এবং তেলের চাহিদার ৯৭ শতাংশই আমদানির ওপর নির্ভরশীল। আর এই আমদানির শীর্ষ জোগানদাতা রাশিয়া। দেশটি একাই ইউরোপের গ্যাস আমদানির ৪০ শতাংশ এবং তেল আমদানির ২০ শতাংশ জোগান দেয়। তাই আপাতত ইউরোপের সামনে রাশিয়ার জ্বালানির কোনো বিকল্প নেই।
আন্তর্জাতিক তেলের বাজার থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াসও বাকি বিশ্বের জন্য ভালো হবে না। কারণ রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দেশ। বিশ্ববাজারে প্রতিদিন ৭ মিলিয়ন ব্যারেল পেট্রোলিয়াম পণ্য রফতানি করে থাকে রাশিয়া। রাশিয়ার এত বিপুল তেল বাজারে না এলে জ্বালানি সংকটে পড়বে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের মতো তেল আমদানিনির্ভর এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোও।
বাঁচতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র নিজেও। এরই মধ্যে দেশটিতে বেড়ে গেছে গ্যাসোলিনের দাম। দেশটির তেলের আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ফিউচার বুধবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছিল ১২৬ ডলারে। অথচ ইউক্রেন সংকট শুরুর আগে এর দর ছিল প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারের নিচে। রাশিয়ার তেলের বিকল্প অনুসন্ধান না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিনের দাম বাড়তেই থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জয়নিউজ/পিডি