যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীতে চলমান অস্থিরতা পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়, এই ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীর একের পর এক নেতা যখন পদত্যাগ করছেন, তখন এ ব্যাপারে একেবারে নীরব থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীর অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেওয়া হবে না। বরং বিএনপি কিভাবে এর মূল্যায়ন করে- সেদিকে নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। যদিও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘আগে ক্ষমা চাক । তারপর ভেবে দেখব।’ সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্যের পর দলের সিনিয়র নেতাদের এ ব্যাপারে আপাতত বক্তব্য না দিতে বারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু জামায়াতের নিবন্ধন ও বৈধতা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে, সেহেতু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করে বির্তকে জড়াতে চায় না আওয়ামী লীগ। বরং জামায়াত ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, সেদিকে আপাতত নজর দিতে চায় দলটি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার বিকালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে ক্ষমতাসীন দলে সন্দেহ বাড়ছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, জামায়াতে ইসলামীতে ভাঙন আগে কেউ দেখেনি। অথচ এখন একের পর এক ভাঙন ও পদত্যাগের ঘোষণা আসছে। বিষয়টি সরকারের কাছে বেশ সন্দেহের মনে হচ্ছে।
কারণ এখন দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো। নির্বাচন শেষ। হয়রানি-গ্রেফতারে অভিযান নেই। তারপরও জামায়াতের মধ্যে বিভাজন এই সন্দেহের কারণ। আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদত্যাগ যে কোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। এরমধ্যে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, জামায়াত কি করবে আর কি করবে না, সে বিষয়ে আমরা ভাবছি না। যেহেতু আদালতে জামায়াত ইস্যুতে মামলা বিচারাধীন, তাই এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। তবে স্বাধীনতার ৪ যুগ পর জামায়াতের শীর্ষপর্যায়ে যে অনুশোচনা সৃষ্টি হয়েছে, তা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। তবে যুদ্ধাপরাধীরা কখনোই ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত নন। আর রাষ্ট্র তাদের ক্ষমা করবে বলে আমি মনে করি না।
তিনি বলেন, জামায়াতের ভাঙাগড়ার খেলায় আমরা নজর রাখছি। দেশবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্র আমরা অতীতেও মেনে নিইনি, আগামীতেও নেব না। তিনি এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করায় কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বিশিষ্ট আইনজীবী আবদুর রাজ্জাককে অভিনন্দন জানিয়ে এক বিবৃতিতে আল্লামা মাসউদ বলেন, ‘দেরিতে হলেও নিজের ও দলের ভুল বুঝতে পারায় আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। কেবল একাত্তরের নৃশংসতা নয়, ধর্মীয় বিষয়ে জামায়াতের যে অপপ্রচার আর নবী-রাসুলদের নিয়ে অপব্যাখ্যা আছে, সবকিছুর বিরুদ্ধে তাদের মুখ খুলতে হবে।’
জামায়াতের তরুণ কর্মীদের উদ্দেশ্যে ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, ‘যার শরীরে এই বাংলাদেশের রক্ত, সে কিভাবে দেশ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি সংগঠনে থাকে! আপনারা ফিরে আসুন, সত্য ও সুন্দরের পথে। তরুণদের শক্তিকে বাংলাদেশ গড়ার পেছনে ব্যয় করতে হবে।’