আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনে বিএনপি একাধিক নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, এটা কৌশল। তবে এ কৌশল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একেবারেই নতুন। অনেকের আশঙ্কা, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, দলের সিদ্ধান্ত মানার যে নমুনা, তা দলটির নেতাকর্মীরা নিকট অতীতে প্রদর্শন করতে পারেননি। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, নমিনেশন বাণিজ্য এটি।
চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে দলের প্রার্থী ৩ জন। শিল্পপতি মনিরুল ইসলাম ইউসুফ জয়নিউজকে জানালেন, তাঁকে রাখা হয়েছে মূল প্রার্থী হিসেবে। তৃণমূল থেকে উঠে এসে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুল আমিন। তাঁকে মূল প্রার্থী না রেখে রাখা হয়েছে বিকল্প হিসেবে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, রাজনীতি রাজনীতিবিদের হাতে রাখেনি বিএনপি। একই প্রশ্ন অন্য আসনের মূল আর বিকল্প নিয়েও।
পটিয়াতে মূল প্রার্থী গাজী শাহজাহান জুয়েল, বিকল্প এনামুল হক। এনামকে জুয়েলপন্থিদের কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় গাজী শাহজাহান জুয়েল দল থেকে বহিষ্কৃত ছিলেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে জুয়েলকে দলে ভিড়ানো হয়েছে মূল প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু দল নিয়ে এলাকায় কর্মসূচি পালনে ব্যস্ত ছিলেন এনাম। নিকট অতীতে জুয়েলকে পটিয়ায়তো নয়ই, নগরের দোস্ত বিল্ডিংয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়কেন্দ্রিক দলীয় কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। এমনই অভিযোগ দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা-কর্মীদের।
সেই জুয়েলকে মেনে নেবেন কি-না প্রশ্ন করলে তিনি জয়নিউজকে বলেন, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত করা হবে। আমাকে এবার মনোনয়ন না দিলে পরেরবার দেবে। এতে হারানোর কিছুই নেই। দলের জন্য পটিয়ার সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে অতীতের মতোই কাজ করে যাব।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে মূল প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম। তিনি দলের হয়ে আগে এখান থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে দীর্ঘদিন এলাকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত তিনি। তাঁর পরিবর্তে দলের কাজকর্ম দেখভাল করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। সেই মোস্তাফিজকে রাখা হয়েছে বিকল্প হিসেবে।
নগরের চান্দগাঁও এবং বোয়ালখালী নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম. মোরশেদ খান মূল প্রার্থী, বিকল্প হলেন আবু সুফিয়ান। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মোরশেদ খান ২০০১ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আর এলাকায় আসেননি। ২০০৮ এর নির্বাচনে এখানে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন ব্যবসায়ী নেতা এরশাদ উল্যাহ। দীর্ঘদিনের নেতৃত্বশূন্যতায় দলের হাল ধরেছেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান। সেই সুফিয়ান এখানে বিকল্প প্রার্থী।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আবু সুফিয়ান জয়নিউজকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সম্ভাব্য সবকিছুই করবে সরকার। তাদের সেই সুযোগ বন্ধ করার লক্ষ্যে বিএনপি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জননেতা তারেক রহমান যাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা সেই নির্দেশ পালন করব।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের আসনে বিকল্প রাখা হয়েছে বয়সে অনেকটা তরুণ নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তীকে। নোমানের মনোনয়ন বাতিলের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাঁর এই আসনে দিপ্তীর বিদ্রোহী হওয়ারও সম্ভাবনা শূন্য। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কোনো বিকল্প রাখা হয়নি।
সব আসনের বিকল্প প্রার্থীরা যদি নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় থেকে যান, তবে কি অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়। আর বিএনপির এই কৌশল কতটা কার্যকর হয়, তা দেখতে অপেক্ষায় থাকতে হবে মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং নির্বাচন পর্যন্ত।