চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার্থীদের র্যাগিংকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুকে আসছে গা শিউরানো বর্ণনা, যার পক্ষে-বিপক্ষের আলোচনায় সরব হয়ে উঠেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ ভর্তিচ্ছুরা।
ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই র্যাগিংয়ের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করে চবি প্রশাসন। বলা হয় কেউ এ ধরণের ঘটনার শিকার হলে প্রক্টরিয়াল বডিকে জানাতে। কিন্তু সেটা না করে ভর্তিচ্ছুরা বেছে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে।
গত রোববার বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে আশিক ইরান নামে এক ব্যক্তি লেখেন চবিতে তার ছোটভাই মেহেদির র্যাগের শিকার হওয়ার কথা।
তিনি লেখেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের ১৪০নং রুম থেকে মেহেদীকে র্যাগ দিতে ধরে নিয়ে যায় ছাদে। তার অপরাধ ছিল সিনিয়ররা রুমে ঢুকেছে সে কেন দাঁড়িয়ে সালাম দিল না!
তিনি আরও লেখেন, তাকে র্যাগের সময় জিজ্ঞাসা করা হল- পরীক্ষা কেমন হয়েছে। সে বলল, আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। ওরা বলল, তুই আলহামদুলিল্লাহ বললি কেন? তুই তো শিবির!
ইরান আরও দাবি করেন, মেহেদিকে রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত র্যাগের এক পর্যায়ে জামা খুলতে বলা হয়। মেরে রক্তাক্ত করা হয়। মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সে ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষা ভালোভাবে দিতে পারেনি। এ ঘটনায় তিনি ওই হলের ১৪০নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র শোয়েব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র শিবলুকে দায়ী করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শোয়েব বলেন, শিবলু ভাই কয়েকজন প্রার্থী পাঠিয়েছিলেন, তাদের আমার রুমে রেখেছিলাম। রুমে বড় ভাই আসছিল ওই সময়ও মেহেদি পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে ছিল। পরে আমি টিউশনি থেকে এসে তাকে রুমে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করি। অনেক রাতে সে আসে। কিন্তু এ ধরণের কোন কথা বলেনি। জিজ্ঞাসা করা হলে পজিটিভ উত্তর দিয়েছিল। তাকে আমার বিছানাতে ঘুমাতে দিয়েছিলাম। আর রক্তাক্ত হওয়ার কথাটা সম্পূর্ণ ভূয়া। এ ধরণের কিছুই হয়নি।
আর শিবলু বলেন, শুনলাম মেহেদি বেয়াদবি করেছে। তো আমি শোয়েবকে একটু বুঝাতে বললাম। র্যাগ দেওয়ার কথা বলিনি। পরদিনই সে বাড়ি চলে এসে ফেসবুকে এসব প্রচার করে। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলায় তাকে শিবির বলেছে এটা হাস্যকর অভিযোগ। তারা ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য এসব করছে। তাছাড়া ইরান আমাদের বাড়িতে লোকজন নিয়ে এসে আর ফেসবুকে অপপ্রচার চালিয়ে আমার সম্মানহানিও করছে।
এছাড়াও ফেসবুকে নামে-বেনামে বিভিন্ন আইডি ও গ্রুপ থেকে এ ধরণের অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে। ‘বদলে গেছি অনেকটা আমি’ নামক একটি আইডি থেকে কমেন্টে বলা হয়- এফ রহমান হলে ঢুকার সময় এক ভাইকে দেখলাম সে মাত্র হলে ঢুকবে, পানির যে হাউজ ছিল এখানে শার্টের একটা বোতাম খোলা ছিল। কি পরিমাণ মানসিক টর্চার করেছে একমাত্র যারা আমরা কয়েকজন দেখলাম তারা বুঝছি। শেষ পর্যন্ত ছেলেটা কেঁদেই দিয়েছে। চান্স পাইছি, কিন্তু ভর্তি? মাফও চাই, দোয়াও চাই।
এ ধরণের নানান অভিযোগ ও প্রচারণার ফলে ভর্তিচ্ছু এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিভ্রান্ত হচ্ছে। বিব্রত হচ্ছে চবির শিক্ষার্থীরা। ‘রুবেল ইসলাম’ নামের একজন কমেন্টে বলেন, কোন ভার্সিটি নিয়ে কথা হলো না আর চবি নিয়ে সবার এত ক্ষোভ। বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। আমি চবিকে খুব ভালোবাসি কিন্তু এভাবে ছেলেরা ক্ষোভ ঝাড়ছে যেটা অত্যন্ত লজ্জার।
এদিকে ফারহানা আক্তার নামে এক চবি শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলেন, ৪ নভেম্বর পরীক্ষা। ছোটদের জায়গা দিতে আজকে ৩-৪ দিন বইয়ের ধারে-কাছেও যেতে পারিনি। তার ওপর যদি নিজের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে এমন কটু কথা শোনা লাগে তাহলে কেমন লাগে? নাম পর্যন্ত জানি না এমন মেয়েদেরও রুমে রাখছি। শেষ পর্যন্ত এসব শোনা লাগলো!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ঘটনা নিয়ে বেশকিছু নামী-বেনামী আইডি থেকে প্রচার চালানো হলেও কোনটিতেও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। কিভাবে বা কোথায় র্যাগের শিকার হয়েছে এসব তথ্যও নেই কোনটিতে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী জয়নিউজকে জানান, র্যাগিংয়ের ঘটনা নিয়ে কোন অভিযোগ আসেনি। প্রক্টরিয়াল বডি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা গোয়েন্দা বাহিনীর কাছেও এ ধরনের কোন তথ্য নেই। ফেসবুকে অনেকেই অনেক কিছু লেখে। কিন্তু কোথাও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই।
জয়নিউজ/জুলফিকার