বাকিতে ব্যবসা। কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় লেনদেন। ভিত্তি শুধু আস্থা, বিশ্বাস। পণ্য কিনে বিক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি চেক! এই চেক ভাঙিয়ে কখনো মিলে টাকা। কখনো চেকের মালিকের পিছনে ঘুরে ঘুম হারাম হয় বিক্রেতার। তবুও দেশের নিত্যপণ্যের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চলছে দৈনিক শত-কোটি টাকার লেনদেন। বিশ্বাসকে পুঁজি করে চাল, ডাল, মসলাসহ খাদ্য তালিকায় থাকা সকল দ্রব্যের বিকিকিনি হয় এখানে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সোলাইমান বাদশা জয়নিউজকে বলেন, ক্রমবর্ধমান নিয়ম অনুসারে ব্যবসায়ীদের কাঠামো পরিচালনা হয়ে আসছে। ব্যবসার মূল ভিত্তি বিশ্বাস। পূর্বে ব্যাংক ছিল না। বিশ্বাসের মাধ্যমে তখন লেনদেন হতো। এখন প্রসার ঘটেছে ব্যবসা-বাণিজ্যের। সৃষ্টি হয়েছে ব্যাংকের।
তিনি বলেন, এ বিশ্বাসের কারণে ১৫ দিনের বাকিতে পণ্য বিক্রি করছি। ক্রেতারা পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টাকা প্রদান করছে ১৫ থেকে ২০ দিন পর। আগে লেনদেন হতো সপ্তাহে দুইবার। সিলেটের এক গ্রাহকের সঙ্গে ব্যবসা করছি, উনাকে না দেখে বিশ্বাসের মাধ্যমে লেনদেন করি। ব্যবসায়িক লেনদেনে পরিচয় হয় এখানে, কোনো আত্মীয়তার পরিচয়ে নয়।
তিনি বিশ্বাসভঙ্গের ব্যাপারেও কথা বলেন। এক গ্রাহককে চার কোটি ৭৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করে টাকার দেখা মেলেনি এখনও। চেকের মাধ্যমে প্রতারণার স্বীকার হন ব্যবসায়ীরা। তবে এখনও বিশ্বাস রয়েছে বিধায় ব্যবসা টিকে আছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. আমিনুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, অনেক আগে থেকেই মুখের কথার উপর ভিত্তি করে লেনদেন হয়ে আসছে। কোটি টাকার লেনদেন করি কোনো নথিপত্র ছাড়া। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্ডার দিলে পণ্য ডেলিভারি দিই। পণ্যের মূল্য প্রদান করা হয় পাঁচদিন পর।
তবে তিনি জানালেন, শুধু চেক নয়, পে-অর্ডারের মাধ্যমেও আজকাল প্রতারণার শিকার হতে হয়।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ জয়নিউজকে বলেন, অন্ধ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এখানে পরিচালিত হয় ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানের নাম ও সুনামের ওপর বিশ্বাস রেখে কোটি টাকার লেনদেন করেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে অবিশ্বাসের কাজও করেন অনেকে।
ব্যবসায়ী মো. ওমর আজম জয়নিউজকে বলেন, এখন চেকের মাধ্যমে লেনদেন করতে ভয় পান ব্যবসায়ীরা। মামলা ঘুরে বছরের পর বছর। নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য বিভিন্ন কারণে বিশ্বাস শব্দটি আজ অবিশ্বাসে রূপ নিচ্ছে।