পড়াশুনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ায় ছেলে নবী হোসেন (১৮)কে বকুনি দেয় বাবা শামসুল হক। আর তাতেই অভিমানে বাড়ি ছেড়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সাগর উপকুলে বালু তোলাের একটি ড্রেজার কাজ নেয় নবী।
ভেবেছিলেন কিছু টাকা উপার্জন করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে আর বাবার ভুল ধারণা ভাঙাবে। সেটা আর হয়ে উঠলো না। উল্টো পিতা-মাতা স্বজনদের কাঁদিয়ে চলে গেল পরপারে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের আকিলপুরের সাগর উপকুলে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে তার লাশ।
মানবিক সংগঠন গাউছিয়া কমিটির সহযোগীতায় নবী হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে কুমিরা নৌ পুলিশ। নিহত নবী হোসেন লক্ষীপুর জেলার আলেকজান্ডার থানার সবুজ গ্রামের শামসুল হকের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জোয়ারের পানিতে লাশ ভেসে আসতে দেখে স্থানীয়রা কুমিরা নৌ পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশটি উদ্ধার করে।
এলাকাবাসীরা জানায়, গত কয়েকদিন আগে ফৌজদারহাট এলাকায় মধ্য সাগরে একটি বালু তোলার ড্রেজার ডুবে গিয়ে ৫ জন শ্রমিক নিখোঁজ হয়। নবী হোসেন তাদেরই একজন। পরে নিহতের বাবা এসে ছেলের লাশ সনাক্ত করে।
নিহতের পিতা শামসুল হক জানান, পড়াশুনার বিষয় নিয়ে ছেলেকে বকুনি দিলে অভিমানে সে বাড়ি ছেড়ে যায়। তার খোঁজ না পেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছি।
আজ সকালে সাগর উপকুলে জোয়ারে ভেসে আসা একটি লাশের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি আমার ছেলে নবীর লাশ। বুক চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে অসহায় পিতা বলেন, ছেলেকে এভাবে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো, তা কখনো ভাবিনি। আগে জানলে হয়তো ছেলেকে বকতাম না,বাড়ি থেকে বের হতে দিতাম না।
কুমিরা নৌ পুলিশের ইনচার্জ নাছির উদ্দিন বলেন, সাগরে একটি লাশ ভেসে আসে। আমরা গাউছিয়া কমিটির সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করি। লাশের পরিবার এসেছে। আইনি প্রক্রিয়ার পর পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী সাগর উপকূল থেকে বালুবাহী বাল্কহেডটি সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
বাল্কহেডটি সন্দ্বীপ চ্যানেলের চার কিলোমিটার এলাকা অতিক্রমকালে বড় ঢেউয়ের কবলে পড়ে ইঞ্জিনের অংশ ডুবে যায়। এতে নিখোঁজ হন ওই বাল্কহেডে থাকা শ্রমিক মো. মান্নান (২৬), আবদুল হান্নান (১৯), সোনা মিয়া (৫৫) ও নবী হোসেন (১৮)।
এ ঘটনার চার শ্রমিককে উদ্ধারে অভিযান চালান ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। নিখোঁজের চার দিন পর চার শ্রমিকের মধ্যে আজ নবীর মরদেহ পাওয়া গেল। তবে এখনো তিন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।
জেএন/এমআর/পিআর