মিরসরাই ট্র্যাজেডি দিবস আজ। ২০১১ সালের এই দিনে উপজেলা সদর থেকে ফুটবল খেলা দেখে ট্রাকে করে বাড়ি ফেরার পথে বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় খাদে পড়ে নিথর দেহে পরিণত হয় ৪৫টি তরতাজা প্রাণ। শোকাবহ মিরসরাই ট্র্যাজেডির এক যুগ ফেরিয়ে দেখতে দেখতে কেটে গেছে ১৩টি বছর। তবে সে দিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়ান স্বজনরা। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে নিরবে-নিভৃতে কাঁদেন গর্ভধারিণী মা।
দিনটি এলেই শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন স্বজন, সহপাঠী ও শিক্ষকরা। এখন স্মৃতি বলতে শুধুমাত্র ছবির সেই বাঁধানো ফ্রেম। পুত্রহারা বাবা-মা সেই ছবি নিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে আহাজারি করেন। তবে নিহত শাকিব, নয়ন, উজ্জল, টিটু, ইফতেখার, সাজু, কাজল, জুয়েল, মোবারক, ধ্রুব নাথদের পরিবারের খোঁজ রাখে না কেউ। দিবস এলে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ও স্কুল কর্তৃপক্ষ ফটোসেশান ও আলোচনা সভায় সীমাবদ্ধ থাকেন বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহত এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘দেখতে দেখতে আদরের সন্তানকে হারানোর আজ ১৩টি বছর পার হয়ে গেল। স্বপ্ন ছিলো নিজের একমাত্র সন্তানকে ডাক্তার বানাবো। কিন্তু ভয়াল ট্র্যাজেডি কেড়ে নিলো সেই স্বপ্ন।’
সন্তানহারা এই পিতা আরো বলেন, ‘দিবস এলে শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আর স্কুল কর্তৃপক্ষ শুধু ফটোসেশান আর আলোচনা সভায় সীমাবদ্ধ থাকেন। আমাদের খবর কেউ আর নেয় না এখন।’
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে আবুতোরার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন বাবুল জানান, মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে পবিত্র কোরআনে খতম, বেলা ১১টায় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ এবং ‘অন্তিম’ এ পুষ্পস্তবক অর্পণ, সাড়ে ১১টায় শোক সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাই স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা শেষে একটি ট্রাকে করে বিজয়োল্লাস করে আবুতোরাবে ফেরার পথে সৈদালীতে একটি ডোবায় শিক্ষার্থীদের বহনকারী মিনি ট্রাকটি উল্টে যায়। ওই সময় বাঁচানো যায়নি পিকআপের তলানিতে আটকে পড়া কোনো খুদে শিক্ষার্থীকে। একে একে নিথর দেহে পরিণত হয় আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন, আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ জন, আবুতোরাব ফাজিল মাদ্রাসার ২ জন, প্রফেসর কামালউদ্দিন চৌধুরী কলেজের ২ জন, এক জন অভিভাবক, ২ জন ফুটবলপ্রেমী যুবকসহ ৪৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রচিত হয় ‘মিরসরাই ট্র্যাজেডি’। ওই বছরই ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণীয় করে রাখতে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ আর দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’।
জেএন/এমআর