প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে কক্সবাজারের চারটি নির্বাচনি এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা নেমে পড়েছেন প্রচার প্রচারণায়। নৌকার পক্ষে দিন-রাত মিটিং-মিছিলে ব্যস্ত সময় পার করেছেন তারা। নৌকা প্রতীকের পোস্টার-লিফলেট ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনি এলাকার হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট। ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সবমিলিয়ে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে চলছে সরব প্রচারণা।
অন্যদিকে বিএনপি নামমাত্র প্রচারণা চালালেও মাঠে নেই জাতীয় পার্টি, গণঐক্য ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী বা সমর্থকরা। কোথাও তাদের প্রচার- প্রচারণার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কক্সবাজার পৌরসভায় মাঝেমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মাইকিং করতে দেখা গেছে।
তবে গণমাধ্যমে সরব রয়েছেন বিএনপি প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও তাদের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে কয়েকবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলা, গ্রেপ্তার আর হুমকির কারণে প্রচারণা করতে পারছেন না তারা।
জেলা রিটার্নিং কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের চারটি আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৩৪ জন প্রার্থী রয়েছে। চারটি আসনের ৪ পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নে ৫১৩টি ভোটকেন্দ্রের বিপরীতে এবারের ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৮২ জন। এদের মাঝে ৭ লাখ ৯ হাজার ৪৯৭ জন পুরুষ ও ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫৮৫ জন নারী।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম। তিনি প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে পথসভা ও গণসংযোগ করছেন। তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পথসভা, জনসভা, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করছেন। অনেক সময় ক্লান্তিতে ভোটারের বাড়িতেই কিছু সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পড়েন জাফর আলম।
তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহম্মদের স্ত্রী ও সাবেক সাংসদ হাছিনা আহম্মেদ। মনোনয়নপত্র জমা এবং প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর প্রথমদিকে নিজের নির্বাচনি এলাকায় তাঁর সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও এখন কোন প্রচারণা চোখে পড়ছে না। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে তারা প্রচারণা চালাতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত তাদের নেতাকর্মীদের হুমকী দেওয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। তাদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়ার পাশাপাশি পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, মাইক ভাঙচুর, কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আলম বলেন, ‘গত দশ বছর তারা জনগণের পাশে ছিল না। তাই জনগণের সমর্থন না পেয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। বরং গত কয়েকদিনে বিএনপির নেতাকর্মীরা আমার নির্বাচনি অফিসে অগ্নিসংযোগ, প্রচারণার গাড়ি ভাঙচুরসহ বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করেছেন। তাদের হামলায় আহত অনেকে হাসপাতালে রয়েছেন। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সমর্থন নিয়ে বিজয় নিশ্চিত করা।’
এই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সাংসদ হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছও মাঠে রয়েছেন। তবে তাঁকেও প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। তরুণ এ সাংসদ জনসমর্থন আদায়ে চষে বেড়াচ্ছেন গোটা এলাকা। সঙ্গে থাকছেন দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী।
এ আসনে গণঐক্যের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ড. আনসারুল করিম তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও মিটিয়ে নিয়েছেন। ফলে তিনি বিজয়ের পথে এগিয়ে রয়েছেন বলে তাঁর সমর্থকদের দাবি।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদকে। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাঁর পক্ষে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও মাঠ পর্যায়ে তাদের দেখা মিলছে না। তবে বিএনপির প্রার্থী আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ আইনি লড়াই শেষে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে তিনিও মাঠে সরব নেই।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছি। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি পথসভা ও জনসভায় যোগ দিচ্ছি। সর্বত্র অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।’
এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মহিবুল্লাহকেও মাঠে দেখা যায়নি।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল এবং বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল। এ আসনে নৌকার জমজমাট প্রচারণা থাকলেও ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে মাইকিং ছাড়া আর কোন প্রচারণার দেখা মিলছে কম।
বিএনপি প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘মানুষ যদি ভোট দিতে পারে তবে আমার বিশ্বাস কেউ আমার বিজয় ঠেকাতে পারবে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকী দিচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে একাধিক। আমার প্রচারণায় বাধা প্রদান করছে। তারপরও মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী কমল ছাড়াও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। লিফলেট বিতরণ এবং তাদের পথসভায় উপস্থিতিও দেখার মতো।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছি। পথসভায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমার বিশ্বাস জনগণ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায়। তাই তারা নৌকায় ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আবারো ক্ষমতায় বসাতে উদগ্রীব হয়ে আছে।
বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির অভিযোগ নতুন নয়। তাদের কোনোরকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না, বরং তারা নাশকতা করছে। প্রতিদিন আমার বিভিন্ন নির্বাচনি অফিস পোড়ানো হচ্ছে। মূলতঃ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এখন নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি।’
এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুফিজুর রহমান।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহিন আক্তার চৌধুরী ও বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী। এ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রতিদিন একাধিক পথসভায় যোগদান করছেন। তিনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই বড় জমায়েত হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের আয়োজনে বিভিন্ন পথসভাও থাকছে। উখিয়া-টেকনাফের এ আসনে নির্বাচনি প্রচারণা জমিয়ে তুলেছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত জেনে দলের নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ করেছেন প্রার্থী শাহিন আক্তার। ১৭ ডিসেম্বর তিনি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। অভিযোগে নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি জালিয়াপালং, পালংখালী ইউনিয়নে তাঁর নির্বাচনি প্রচারণার গাড়ি এবং অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ আসনেও তেমন একটা প্রচারণা দেখা যায়নি ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর। জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে থাকা এ নেতার সংবাদ মাধ্যমে থাকে সরব উপস্থিতি। দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মিথ্যা মামলা, পুলিশি হয়রানির অভিযোগ তোলেন তিনি। শুক্রবার সকালে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া টেকনাফ উপজেলার ২৫ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলেও দাবি করেছেন তিনি।
এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাস্টার এম এ মঞ্জুর।