সামাজিক যোগাযোগ সাইটে শ্লেষ-নির্মমতা এমনই সীমা ছাড়িয়েছিল এবং এতটাই প্রকাশ্যে চলছিল যে আর চুপ থাকা যায়নি। হর্তাকর্তার কেউ পোস্ট (লেখা) মুছে দেয়ার অনুরোধ করেছেন, কেউ থামানোর চেষ্টা করেছেন অন্য ভাবে। কিন্তু কোনও এক দুর্বোধ্য আক্রোশে বদ্ধপরিকর লেখক। দাঁতে দাঁত চেপে সমানে মন্তব্যের ঝড় তুলছেন তিনি।
সাংবাদিকতা তার রক্তমাংসে। তাই তীক্ষ্ণ শব্দ, ধারালো বাক্য আর শ্লেষ নিয়ে সরব হোসাইন তৌফিক ইফতেখার। চাটগাঁর মূলধারা যখন বোবা, সরব কণ্ঠস্বর তিনি। কখনো রাজনীতি, কখনো খেলাধুলা, কখনো সাংবাদিকতা, কখনো আন্তর্জাতিক ইস্যু। সমানে সরব তিনি। ব্লগযুগ উড়িয়ে থিতু হয়েছেন ফেসবুকে। বহু সংবাদ আর ফিচারের চিত্রনাট্য লিখেছেন। সাংবাদিকতা তার অস্তিত্ব, সামাজিক যোগাযোগ সাইট তাঁর মোক্ষবিন্দু।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সদস্য, প্রথম আলো আর সমকালের চট্টগ্রামের সাময়িকীর বিশেষ দায়িত্ব পালনের পর এখন সুপ্রভাত বাংলাদেশের সহযোগী সম্পাদক। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, গ্রাফিক্স ডিজাইন ও সংবাদ সম্পাদনায় সব্যসাচী সাংবাদিক। চট্টগ্রামের মূলধারার সংবাদপত্রের প্রায় প্রতিটি হাউজে তার হাতে গড়া প্রতিবেদক রয়েছে। যারা প্রায় কমবেশী একযুগ আগে জনাব তৌফিকের সম্পাদিত পাতায় লিখতেন।
স্বগোত্রীয় কঠোর সমালোচনা ও প্রকাশ্যে ব্যজস্তুতির জন্য হামেশাই সমালোচিত হয়েছেন উপরিতল থেকে। কখনো মেয়র, কখনো প্রধানমন্ত্রী, কখনো সরকার দলীয় ছাত্র-যুব নেতা বা বিরোধী নেতা- তৌফিকের কঠোর শ্লেষ থেকে বাদ পরেনা কেউ। মন্তব্য আর প্রতিমন্তব্যে ভরে ওঠে তার ফেসবুক পোস্ট। প্রভাবশালী মহলকে নিয়ে যখন প্রচলিত সাংবাদিকতা নীরব, তখন উঠে তৌফিকের কিবোর্ডে ঝড়।
হোসাইন তৌফিক ইফতেখার বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ব্যক্তিগত আলাপে তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে দৈনিক প্রথম আলোতে সহ-সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। এর আগে দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক আজাদীসহ বিভিন্ন দৈনিকে লেখালেখি করে বেশ সুনাম কুড়িয়ে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম সারির একজন ব্লগার। জার্মান ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে’র জরিপভিত্তিক ব্লগিং প্রতিযোগিতায় সারা দেশে তৃতীয়স্থান দখলে নিয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিকতার সাথে তথ্যপ্রযুক্তির মেলবন্ধনে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ডেভেলপ করেছেন। পাশাপাশি তাঁর নান্দনিক ডিজাইনও সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ইন্টারনেটের মহাসমুদ্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য এক করে তিনি সংকলন করেছেন ‘ফিরে দেখা একাত্তর’। বাংলাভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগ সামহোয়্যারইনব্লগে মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রচুর লেখা ছিলো যার বেশিরভাগই ভালো লেখা। সেই লেখাগুলোকে এক মলাটের ভেতরে নিয়ে আসার দুঃসাধ্য কাজটি করার দলের একজন তিনি।
সর্বশেষ কথা, তৌফিক পুরাদস্তুর সাংবাদিক। সময়ের তাড়নায় প্রযুক্তিবান্ধব এই মানুষের সাথে অনেকে সমঝোতা করেছেন বটে, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে মান-অভিমানের অভিযোগও কম ওঠে নাই। প্রযুক্তি সমাজের বহুত্ববাদে বিশ্বাসী আর সাংবাদিকতার পশ্চাৎপদ নেতৃত্বকে একহাত নেয়ার পণ করেছেন তিনি। হালদা দিয়ে এত জল গড়িয়ে গেল, সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ অসুস্থ মৃত্যুপথযাত্রী তৌফিকের জন্যই শুভকামনার মিছিল বয়েছিল এই শহরেই।
তিনি কে?
বিগত যৌবনা প্রথাগত প্রেসরিলিজ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে বোবা শহরের কণ্ঠস্বর।
জয়নিউজবিডির এ আয়োজনে আগামীকাল (১১ আগস্ট) পড়ুন সাংবাদিক রফিকুল বাহারকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।