আগে বলা হতো- ‘রঙ্গ ভরা বঙ্গদেশ’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজে-কর্মে মনে হয়, ‘চমকে ভরা বঙ্গদেশ’! সত্যিই চমকে ভরা দেশ, ততোধিক চমকে ভরা রাজনীতি। সেই চমকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দায়িত্বশীলতা। যার নাম সদ্য গঠিত মন্ত্রিসভা।
বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতির ইতিহাসে অভাবিত বড় জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চমক নিয়ে এসেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার ম্যান্ডেট নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ এবার একঝাঁক তরুণ ও উদ্যোমী মুখ সরকারে এনেছে। একাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভায় চমক থাকবে- এটা জানা ছিল। কিন্তু নতুনদের এমন জয়জয়কার এবং শপথ গ্রহণের একদিন আগেই নজিরবিহীনভাবে ঘোষণা হবে তাঁদের নাম, স্বয়ং শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ কি জানত?
চমকে ভরা মন্ত্রিসভা
বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার কাজ হলো জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন করা। মন্ত্রিসভাই হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শাসনিক প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মন্ত্রিসভার প্রধান। শেখ হাসিনা ছাড়া মন্ত্রিসভার পূর্ণ মন্ত্রী ২৪ জন, প্রতিমন্ত্রী ১৯ জন ও উপমন্ত্রী ৩ জন। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ৬ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ৭ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যগণ শপথ নেন। আপনারা জানেন, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পায় ২৮৮ আসন। এবারের মন্ত্রিসভায় বিরল এক ঘটনা ঘটেছে। যাকে বলা যেতে পারে শেখ হাসিনার বিশাল বিচক্ষণতা। নিচে সেরকম কিছু তথ্য পেশ করছি-
পেশাদার একাউন্টেট হলেন অর্থমন্ত্রী
বহুবছর পর একজন পেশাদার একাউন্টেন্ট (এফসিএ) হয়েছেন অর্থমন্ত্রী। হ্যাঁ, আ হ ম মোস্তফা কামাল বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও ক্রিকেট সংগঠক। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাউন্টেন্সি ও আইন বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৭০ সালে তদানীন্তন পুরো পাকিস্তানে চার্টার্ড একাউনটেন্সি (সিএ) পরীক্ষায় মেধা তালিকায় সম্মিলিতভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পেশায় চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট মোস্তফা কামাল এ পর্যন্ত তিনবার এমপি হিসেবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
পেশাদার কৃষিবিদ কৃষিমন্ত্রী
শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার আরেক চমক পেশাদার কৃষিবিদ হিসেবে ড. আব্দুর রাজ্জাককে কৃষিমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া। যিনি ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টাঙ্গাইল-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের তৎকালীন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ড. রাজ্জাক, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০০১ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিজীবন শেষ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৭২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জনের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাজ্যের অ্যাঞ্জেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ালেখা করেন। বাংলাদেশে ফার্মিং সিস্টেম রিসার্চ ও স্থায়ী গ্রামীণ কৃষি উন্নয়ন বিষয়ে তিনি অন্যতম একজন বিশেষজ্ঞ।
পেশাদার সেতুমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশের একজন সফল রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে পালন করেন সক্রিয় ভূমিকা। উত্তাল একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে সড়ক, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী হান ওবায়দুল কাদের। সেই থেকে এ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞের মতোই কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন তিনি। এ কর্মকাণ্ডে তিনি যেন কখনো ছিলেন প্রকৌশলী, আবার কখনো স্থাপত্যশিল্পী। সফলভাবে এ মন্ত্রণালয় পরিচালনার জন্য গত ৬ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে একই মন্ত্রণালয়ে রেখে দেন। পেশাদার তারাই, যারা দীর্ঘদিন একই পেশায় থাকেন। সেই হিসেবে পেশাদার সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলা যায় ওবায়দুল কাদেরকে। রাজপথে থেকেই তিনি মন্ত্রিত্ব করেছেন। নিজের পুরোটা উজাড় করে দিয়ে চেষ্টা করেছেন এ মন্ত্রণালয়কে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে। যিনি এই পেশায় শুধু সফলই হননি, রেখেছেন সততার দৃষ্টান্তও। যাঁর সরাসরি নজরদারিতে এগিয়ে চলছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু ও কর্ণফুলী টানেলের কাজ।
তথ্যপুত্র ড. হাছান মাহমুদ তথ্যমন্ত্রী
নতুন গঠিত মন্ত্রিসভায় চমক হিসেবে বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সতর্কতার নমুনা প্রকাশ পেয়েছে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা ও তথ্যপ্রবাহের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ড. হাছান মাহমুদ দায়িত্ব পেয়েছেন তথ্যমন্ত্রীর। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকসমাজের অত্যন্ত প্রিয়জন এই হাছান মাহমুদ মুখ খুললেই ‘নিউজ’ হয়ে যেত। সেই নিউজ মানুষ দেখেছে, শুনেছে। বিরোধী দলের অপপ্রচার ও কুৎসার জবাব দিতে তিনি সিদ্ধহস্ত। আলোচনা-সমালোচনায় তাই তাঁকে বছরভর থাকতে হয়েছে সংবাদ শিরোনামে। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলের প্রতিকূল সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় বারবার প্রশংসিত হয়েছেন হাছান মাহমুদ। সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে হ্যাট্রিক বিজয় লাভ করেন তিনি। এবারের নির্বাচনে ২ লাখ ১৭ হাজার ১৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তিনি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী পান মাত্র ৬ হাজার ৬৫ ভোট।
পেশাদার কূটনীতিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আবুল কালাম আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যিনি আগস্ট ২০০৯ থেকে অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট-১ আসন থেকে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর পেশাদারিত্ব রীতিমতো অবাক করার মতো। ১৯৭৯ সালে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ পাস করেন। এর আগে ১৯৭৬ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল কলেজ থেকে আইনশাস্ত্রে এলএলবি অর্জন করেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া চালিয়ে যান এবং নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বোস্টন, ম্যাসাচুসেটস থেকে ১৯৮৮ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব এবং ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত শিল্প ও বাণিজ্য এবং খনিজ সম্পদ ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পৃথিবীর কয়েকটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন- মেরিম্যাক কলেজ, সালেম স্টেট কলেজ, নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্টে অর্থনীতি ও ব্যবসায় প্রশাসন পড়িয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালের আগস্টে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি নিযুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে শিক্ষকতা চালিয়ে যান।
দক্ষ হাতে দেশ সামলেছেন আসাদুজ্জামান খান
আসাদুজ্জামান খান একজন বিচক্ষণ ও দক্ষ রাজনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ঢাকা-১২ আসন থেকে নির্বাচিত দশম জাতীয় সংসদের সদস্য ও বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে তিনি বর্তমানে বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানের মাধ্যমে দেশে মাদকের প্রকোপ কমিয়ে আনতে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ও জাতিসংঘে টেকসই শান্তি সম্মেলনসহ বহু আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় তিনি অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত ১০টি প্রতিষ্ঠান সত্যিকার অর্থে বিশ্বমানের নিরাপত্তা ও সেবাদানে প্রাগ্রসর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের স্থায়ী কামিটির সদস্য ছিলেন। প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড এবং প্রেস কাউন্সিলেরও একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাবেক সফল আমলা পরিকল্পনামন্ত্রী
এম এ মান্নান একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, সাংসদ। তিনি ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থ এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এম এ মান্নান ছিলেন তৎকালীন সিএসপি কর্মকর্তা। তিনি কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (বাংলাদেশ) যুগ্ম সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের (বাংলাদেশ) মহাপরিচালক এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এম এ মান্নান ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন শেষে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন।
পাহাড়ি বীর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী
বীর বাহাদুর উশৈ সিং হলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও ৩০০ নম্বর (বান্দরবান) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ছয়বার তিনি এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। গত সংসদ আসনে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী, আর এবার পূর্ণ মন্ত্রী। বীর প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে পাহাড়ে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে।
সফল ব্যবসায়ী পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী
গোলাম দস্তগীর গাজী একজন রাজনীতিবিদ, যিনি ২০০৮ সালে প্রথমবার এবং ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতাপূর্ণ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার দস্তগীর গাজীকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।
কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা খাদ্যমন্ত্রী
সাধন চন্দ্র মজুমদার বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের একজন বর্ষীয়ান নেতা এবং বর্তমান সরকারের খাদ্যমন্ত্রী। মধ্যবিত্ত পরিবারে পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বাবা ছিলেন ধান ব্যবসায়ী। ব্যক্তিজীবনে তিনি চার কন্যা সন্তানের জনক। নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করা সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৮৪ সালে হাজীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অর্থাৎ তৃণমূল থেকে উঠে আসা সংগ্রামী এক নেতার আইকন সাধন চন্দ্র মজুমদার।
একজন আর্কিটেক্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী
ইয়াফেস ওসমান হলেন একজন স্থপতি ও রাজনীতিবিদ। তিনি ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই থেকে বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী। এর আগে তিনি একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক। ১৯৪৬ সালের ১ মে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তির পিতা প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান। ইয়াফেস ওসমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অফ আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
উচ্চ শিক্ষার আলোয় আলোকিত শিক্ষামন্ত্রী
সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি চাঁদপুর-৩ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পড়েন। এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমঝোতা ও দ্বন্দ্ব নিরসন-এর ওপর একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী। সাবলীল বক্তা, সুশিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে তাঁর খ্যাতি আছে।
একজন ডাক্তার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী
ডা. মুরাদ হাসান বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। ২০০০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা মুরাদ হাসান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনকোলজি বিভাগে কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিরও কেন্দ্রীয় সদস্য এই চিকিৎসক।
রানা প্লাজার দুর্যোগ প্রতিরোধের নায়ক দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী
রানা প্লাজা ধসে পড়ে শত শত শ্রমিকের হতাহতের সময় নিজের হাসপাতালের দুয়ার খুলে দেওয়া ডা. মো. এনামুর রহমান পেয়েছেন দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। পেশায় চিকিৎসক এ সাংসদ এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান। এছাড়া এনাম মেডিকেল হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এনাম এডুকেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকায় তিনি মানবসেবার অনন্য নজির তৈরি করেছেন।
তরুণ প্রযুক্তিবিদ তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী
জুনাইদ আহ্মেদ পলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী। যিনি ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। ২০১৬ সালের মার্চে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জুনাইদ আহ্মেদ পলককে ইয়াং গ্লোবাল লিডার ২০১৬’ হিসেবে মনোনীত করে। ৪০ বছরের কম বয়সি তরুণদের নাম প্রকাশ করে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে তাঁকে এই পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ‘ডিজিটাল গভর্নমেন্ট’-এ বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান পান তিনি।
সফল ব্যবসায়ী নেতা টিপু মুনশি
টিপু মুনশি রাজনীতিবিদ এবং রংপুর-৪ পীরগাছা কাউনিয়া আসনের সংসদ সদস্য।পেশায় ব্যবসায়ী টিপু মুনশি রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। পোশাকশিল্পের ব্যবসার পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সর্বপ্রথম তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া অন্যতম উদ্যাক্তা হিসাবে সিপাল গ্রুপের এমডি পদে রয়েছেন। তিনি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন রফতানির যে টার্গেট রয়েছে তা পূরণ করাই হবে মূল লক্ষ্য।
আলোয় ভুবন ভরা
বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। কিন্তু এমন পেশাদার একটা মন্ত্রিসভা পেতে আমাদের ৪৭ বছর লাগলো। উপরের ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীরাও নিজ নিজ কর্মে উজ্জ্বল।
ইউরোপের শিক্ষায় বিদ্যুতের ঝলকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে অবস্থিত হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন এফ কেনেডি স্কুল থেকে উচ্চ শিক্ষিত। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একে এম এনামুল হক শামীম। যিনি ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন নিজের কর্মদক্ষতা ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে। তিনিজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিপুল ভোটে ১৯৮৯ সালে তিনি জাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। যিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (NDC) -এর অধীনে ক্যাপস্টোন কোর্স সম্পন্ন করেন।
চট্টগ্রামের রাজনীতির চিরতরুণ ও চিরসবুজ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। চট্টলার প্রখ্যাত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর এই সন্তান ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষিত। যিনি প্রধানমন্ত্রী থেকে পেয়েছেন সততার পুরস্কার।
এবারের মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে কনিষ্ঠতম সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্টগ্রামের রাজনীতির নওজোয়ান নওফেল। মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র এই নওফেল। যিনি রাজনীতিতে আসলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই সরকারের মন্ত্রী পরিষদে স্থান করে নিয়েছেন। পেয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব।
চ্যালেঞ্জকে জানাই স্বাগত
৪৭ জনের নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে যাত্রা শুরু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শেখ হাসিনার নতুন এই মন্ত্রিসভায় যারা স্থান পেয়েছেন তাদের মধ্যে ২৭ জন একেবারেই নতুন। ২৭ জনের মধ্যে অনেকে কখনই ভাবেননি যে তিনি মন্ত্রী হবেন বা হতে পারেন। কিন্তু এক ফোনকলেই তাদের ভাগ্যদুয়ার খুলে গেছে। অনেকেই তাই নতুন এক ঘোরের মধ্যে রয়েছেন। তবে অনেকেই ভেবেছিলেন মন্ত্রিসভায় তারা অনিবার্য। কিন্তু সেরকম বড় অংশের ঠাঁই হয়নি মন্ত্রিসভাতে।
বর্ষীয়ান নেতারা নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না পাওয়ার অর্থ, তাঁদের কাঁধে এখন দলকে সামলানোর দায়। এটাও প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতা বলে মনে করি। সরকার ও দল রেললাইনের সমান্তরাল দুটি লাইন, কিন্তু পৃথক সত্ত্বা হিসেবে রাখতে চাইছেন নেত্রী।
একজন সাধারণ পাঠক ও রাজনীতি বিশ্লেষক হিসেবে অনেক অভিজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের মন্ত্রী পরিষদে ডাক না পাওয়াটা দশজনের মতো আমার কাছেও কিছুটা বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কিন্তু আমার ’বিস্ময়’র চাইতেও শেখ হাসিনার ‘বিচক্ষণতা’র মূল্য অনেক বেশি। এর চেয়ে বড় বিষয় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রমাণ করেছেন, দলের প্রতি আনুগত্য থাকলে পর্যায়ক্রমে সবাই মূল্যায়িত হন। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই দূরদর্শিতায় ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে দলের প্রবীণ ও প্রজ্ঞাবান নেতাদের। কারণ বর্ষীয়ান এই নেতারাই যে দল পরিচালনা করবেন এবং দিকনির্দেশনা দিবেন মন্ত্রিপরিষদকে। লক্ষ-কোটি বাঙালির মতো আমিও চাই, নতুন কিছু করুক নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদ। নতুন মন্ত্রিপরিষদকে স্বাগত জানাই।