নগরের চাক্তাই রাজাখালী খাল এলাকায় আয়েশা বেগমের বাস। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় ভারি কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই সংসারের দায়িত্ব এসে পড়েছে আয়েশার ঘাড়ে। দিন-রাত নগরের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে নগরবাসীর পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মানুষের ফেলে দেওয়া পলিথিন-বোতল কুড়িয়েই চলে আয়েশার জীবন। আর এই অপ্রয়োজনীয় জিনিষ কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করছেন আয়েশা ও তার মতো অনেকে।
নগরবাসীর একটা বিরাট অংশ নিজের অজান্তে নিজেদের প্রাণপ্রিয় এই শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। সেইসঙ্গে নগরকে করছে দূষিত। দোকান থেকে চিপস্ কিনে খাওয়ার পর প্যাকেট ফেলছে সড়কে। তা গিয়ে পড়ছে ড্রেনে। এতে ড্রেনের মুখ বন্ধ হচ্ছে। হচ্ছে জলাবদ্ধতা, বাড়ছে মশা। আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরবাসীকে ‘ক্লিন সিটি গ্রিন সিটি’ উপহার দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
তিনি নগরের প্রতিটি বাসা, অফিস, দোকানে ময়লা ফেলার বিন দেন। তা ব্যবহার করছে না অনেকে। কেউ কেউ বিনে ডাল-চালও রাখছে। অথচ বেলা শেষে দোষ দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে। বুলি ঝাড়ছে, সিটি করপোরেশন নাগরিক সুবিধাটুকুও নিশ্চিত করতে পারছে না !
আয়েশা বেগমের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, এক মহিলা ঝুপড়ির পাশে দাঁড় করানো ভ্যানে বসে রয়েছেন। তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বস্তা, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল আ র ভাঙা প্লাস্টিক। কোথাও স্তূপ করে রাখা কাগজ। আয়েশা এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিষ সযত্নে পৃথক করছেন। কোনো বস্তায় প্লাস্টিকের বোতল, কোনোটিতে কাগজ, আবার কোনোটিতে প্লাস্টিকের ভাঙ্গা টুকরা। ঘরের সামনে স্তূপ করে রেখেছেন প্লাস্টিকের বোতল।
সারাদিন নগরের এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই পরিত্যক্ত জিনিষগুলো আয়েশা কুড়িয়ে আনেন। বিকালে বস্তাবন্দি করে রাখেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করে তার দুই ছেলে । আয়েশা প্লাস্টিকের বোতলগুলো বাছাই করেন প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে নিয়ে বিক্রি করেন । সেখানে এগুলো গলিয়ে তৈরি করা হয় প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য।
আয়েশা জানান, প্রতিদিন তার আয় তিন থেকে সাতশ’ টাকা। একদিন এসব পরিত্যক্ত সামগ্রী কুড়াতে না বের হলে সেদিন আয়-রোজগার বন্ধ থাকে।
তবে এ কাজে আয়েশার জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। রয়েছে নানা সংক্রামক রোগসহ শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সারের মতো রোগের আশঙ্কা। কিন্তু তা বলে তো জীবন থেমে থাকতে পারে না। থেমে যাওয়ার অর্থ তো পরাজয়। এই আয়েশাদের মতো মানুষগুলোই আজ আমাদের চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কারে ভূমিকা রাখছে। সেইসঙ্গে তাদের স্বাবলম্বী হওয়াও আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক।