রাত পোহালেই কোরবানির ঈদ। এ নিয়ে সাধারণ জনগণের মতো রাজনৈতিক নেতাদেরও আয়োজনের কমতি নেই। সামনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই এবারের ঈদ জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে পেয়েছে বিশেষ মাত্রা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের এবারের ঈদে ভিন্নতা রয়েছে অন্যান্যবারের তুলনায়। তারা এবার ঈদ করবেন তৃণমূলের সঙ্গে।
নির্বাচনের বাকি আর ছয় মাস। অক্টোবরের শেষে তফসিল ঘোষণা করার কথা। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে ঈদে নির্বাচনী এলাকামুখী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সংসদ সদস্য ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তাঁরা অংশ নেবেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে। অংশ নেবেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে ১৬ আসনের সাংসদ ও রাজনৈতিক নেতারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করেবেন। এবার ঈদে তৃণমূলে জমজমাট হচ্ছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী রাজনীতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক কেন্দ্রীয় নেতা, বর্তমান সংসদ সদস্য ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে এলাকায় চলে গেছেন। কেউ কেউ যাওয়া-আসার মধ্যে রয়েছেন। অনেক নেতা পরিবার-পরিজন নিয়েও এলাকায় যাচ্ছেন। সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেজবানের আয়োজন থাকছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জয়নিউজকে জানিয়েছেন, কেন্দ্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবারের ঈদ নিজ নিজ এলাকায় করার, তৃণমূলকে সময় দেওয়ার জন্য। ফলে বেশিরভাগ নেতাই কোরবানি ঈদ নিজ এলাকায় উদ্যাপন করবেন।
কয়েকজন নেতা জানান, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে ঈদকে কেন্দ্র করে এলাকার ভোটারদের মন জয় করার একটি নির্দেশনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ জয়নিউজকে বলেন, এবারের ঈদে এলাকার মানুষকে সময় দেওয়ার জন্যে একটি মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের বিশেষ উপলক্ষ আর পাওয়া যাবে না। তাই ঈদকে কেন্দ্র করে সবার এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্র চলছে, সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে এবং সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
এছাড়া মিরসরাই থেকে মনোয়ন প্রত্যাশী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরকারে উন্নয়নের এবং আগামী নির্বাচনে জন্য এলাকায় গণসংযোগ করবেন।
সন্দ্বীপের বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা এলাকায় থেকে তৃণমূলের সঙ্গে ঈদ পালন করবেন। মনোয়ন প্রত্যাশী যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান এলাকায় ঈদের আগের দিন পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর জন্য মেজবানের আয়োজন করেছেন।
সীতাকুন্ডের প্রাক্তন সাংসদ আবুল কাশেম মাস্টারের বড় ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
হাটহাজারী থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম প্রতিবারের মতো এবারো এলাকায় থাকবেন বলে জানান।
রাউজানে টানা তিনবারের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, প্রতিবারের মতো নামাজ পড়ে পশু কোরবানি করে নেতাকর্মীদের নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করবো।
এদিকে কয়েক বছর পর আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী চট্টগ্রামে ঈদুল আজহা উদ্যাপন করবেন। চট্টগ্রাম রাউজান উপজেলার সুলতানপুরের নিজ বাড়িতে সপরিবারে অবস্থান করবেন তিনি। বাড়ির পাশে জামে মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করবেন। পাশাপাশি ঈদের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগ, থানা ও উপজেলা যুবলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন।
রাঙ্গুনিয়ার বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ এলাকায় তৃণমূলের সঙ্গে ঈদ করবেন জানিয়েছেন।
বোয়ালখালী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ নিজ এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
অপরদিকে সিডিএ চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী মহিবুল হাসান নওফেল জামতুল ফালাহ মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। প্রতিবারের মতো নেতাকর্মীদের জন্য মেজবানের আয়োজন করেছেন।
নিজ এলাকা ডবলমুরিং থাকবেন এমপি মো. আফছারুল আমীন ।
হালিশহর-পতেঙ্গা আসনের এমপি এমএ লতিফ জয়নিউজকে বলেন, যেখানে ক্যামেরা থাকে সেখানে আমি নামাজ পড়ব না। প্রতিবছর যেভাবে নামাজ আদায় করি সেভাবেই করে এলাকায় থাকব।
পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী জয়নিউজ বলেন, নিজ গ্রামে নামাজ আদায় করে নেতাকর্মীদের নিয়ে খোশগল্প করবো। এছাড়া তিন দিনব্যাপী মেজবানের আয়োজন করেছি। পটিয়াবাসীর জন্য তিন দিনব্যাপী শহর থেকে পটিয়া পর্যন্ত ফ্রি বাসের ব্যবস্থা করেছি।
পটিয়া ১২ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিজিএমইএ সহসভাপতি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির জয়নিউজকে জানান, প্রতিবারের মতো নিজ এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করবো। সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবো। তৃণমূল নেতাকর্মীদের জন্য বিশেষ আপ্যায়নের আয়োজন থাকবে। এলাকায় তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরবো।
চন্দনাইশের এমপি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এলাকায় নামাজ আদায় করবেন।
রিহ্যাব চট্টগ্রাম চাপ্টারের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে থাকব। তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করবো।
সাতকানিয়া বর্তমান এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী নিজ এলাকায় থেকে তিন দিনব্যাপী গণসংযোগ করবেন।
বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান সিআইপি প্রতিবারের মতো নিজ এলাকায় নামাজ আদায় করবেন।