বৈশাখের উৎসব আয়োজনে পান্তা-ইলিশ এখন ভীষণ জনপ্রিয় একটি অনুষঙ্গ। আর কিছু থাক না থাক, এক বাটি পান্তার সঙ্গে এক টুকরো ইলিশ না থাকলে যেন চলেই না! তাই দাম যত চড়াই হোক, বৈশাখ উপলক্ষে মাছের বাজারে ইলিশ কিনতে ভিড় লেগেই থাকে।
তবে ইতিহাস বলছে, পান্তা-ইলিশ বৈশাখী উৎসবে যোগ হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। তবে হুজুগে বাঙালিকে তা বোঝাবে কে। যার সুযোগ নেন অসাধু মৎস্য শিকারীরা। মার্চ-এপ্রিলে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বৈশাখের দিনের ইলিশের চাহিদা মেটাতে লোকচক্ষুর আড়ালে ঠিকই চলে ইলিশ শিকার। ডিম ছাড়ার এই সময়ে ইলিশ আহরণের ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মৎস্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এদেশের মানুষ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক জয়নিউজকে বলেন, মানুষ সবসময় প্রতীক খোঁজে। যেমন হালখাতার জন্য নতুন খাতা, পোশাকের জন্য নতুন পাঞ্জাবি, সাজসজ্জ্বার ক্ষেত্রে অলংকার। আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ আর পান্তা ঐতিহ্যবাহী খাবার। তাই বাঙালি পহেলা বৈশাখে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতীক হিসেবে ঠিক করে নিয়েছে পান্তা-ইলিশ। কিন্তু অনেকে পান্তা-ইলিশের বদলে মিষ্টি, দই বা মরিচ দিয়ে ভর্তা খান। তবে বৈশাখের ঐতিহ্যের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার জানা নেই। এটা নতুন ধারণা। আগে বৈশাখে পান্তার আয়োজন ছিল, তবে সঙ্গে ইলিশ ছিল না।
তিনি বলেন, আমরা বলি মাছে-ভাতে বাঙালি। মধ্যবিত্তÑনিম্নবিত্তের কাছে পান্তা খুবই জনপ্রিয়। অন্যদিকে এদেশে মাছের মধ্যে ইলিশের প্রতি রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। এই দুইয়ে মিলে বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে।
জানা যায়, ইলিশ মাছ আহরণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস। বাংলা মাসের হিসেবে যা আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস। এ সময় আহরিত ইলিশ সুস্বাদু হয়। অন্যদিকে মার্চ মাসে ইলিশ ডিম ছাড়ে। এ কারণে মৎস্য অধিদপ্তর ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে।