চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের তিন কমিটিই বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে উত্তর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দুই সভাপতির মৃত্যুতে ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। ২০১২ সালের ২৫ ডিসেম্বর উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি, ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ও ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর নগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়।
এর মধ্যে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হলেও নগর ও দক্ষিণ জেলা কমিটি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব কমিটির মধ্যে উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুতে সেখানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
২০১৮ সালের ৫ মে নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত তৃণমূলের বর্ধিত সভার পর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দ্বৈত কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২১ জুন নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সাত দ্বৈত কমিটি স্থগিত করা হয়।
পরে ২৭ জুন বর্ধিত সভা ডেকে কমিটিগুলোর বিষয়ে আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ দ্রুত সাত ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য পুনরায় নির্দেশ দেন।
২৭ জুলাই সাত ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে একজনকে আহ্বায়ক, তিনজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৪৭ জনকে সদস্য করে ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। গত পাঁচ বছরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে এটিই ছিল নগর আওয়ামী লীগের বড় সফলতা। বাকি কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও কমিটি গঠনে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি কয়েকটি কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মারা গেলেও সেখানে কাউকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়নি।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘নেত্রীই কমিটি করবেন। কেন্দ্র যখনই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিবে, তখনই আমরা সিদ্ধান্ত মেনে নিব। থানা কমিটি গঠন কাজ চলমান আছে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের কারণে কিছুদিন কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কমিটি গঠনে যেটি বাধা ছিল সেটি তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনে পদক্ষেপ নিচ্ছি। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই সবক’টি কমিটি গঠন করে নগর কমিটি গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করবো’।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনো কোন চিঠি পাইনি। আনুষ্ঠানিক চিঠি পেলেই আমরা পদক্ষেপ নিব। এর আগে আমরা ফটিকছড়িতে নতুন কমিটি করে দিয়েছি। অন্যান্য কমিটিগুলো নতুন করে করা হবে। এরপর নেত্রী জেলা কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন’।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে কমিটিগুলো করতে পারিনি, সেগুলো করার উদ্যোগ নিচ্ছি। আমরা কমিটিতে আসার পর পাঁচটি কমিটি গঠন করেছি। আরো পাঁচটি কমিটি বাকি আছে। এসব কমিটি গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো। এরপর কেন্দ্র থেকে যখনই চাইবে, জেলা কমিটি ঘোষণা করতে পারবে’।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয় ২০০০ সালে। ওই কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম। ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলন হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
রাউজান উপজেলায় প্রয়াত সফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবীকে সভাপতি ও মুসলিম উদ্দিন খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯৯৬ সালে কমিটি করা হয়। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এ কমিটি বহাল রয়েছে। সেখানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ।
সীতাকুণ্ডে আবুল কাশেম মাস্টারকে সভাপতি ও আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১২ সালে কমিটি গঠন করা হয়। আবুল কাশেম মাস্টার মারা যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মোঃ ইসহাক।
মিরসরাইয়ে ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর শেখ আতাউর রহমানকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ কমিটি গঠন হয়।
২০১১ সালের ৩০ জানুয়ারি উপকূলীয় সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটিতে মাস্টার শাহজাহান বিএ’কে সভাপতি ও মোহাম্মদ আলী খসরুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর। এ ছাড়া দক্ষিণ জেলার বোয়ালখালীতে ২০১৭ সালের মে মাসে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়।
বাঁশখালীতে ১৯৯৬ সালে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে সভাপতি ও খোরশেদ আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরে সে কমিটি থেকে খোরশেদ আলমকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক আব্দুল গফুরকে সাধারণ সম্পাদক করা হলেও দীর্ঘ ২৩ বছরেও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি।
২০১৩ সালের ৩ জুলাই খোরশেদ আলমকে সভাপতি ও সালাউদ্দিন হিরুকে সাধারণ সম্পাদক করে লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। ২০১৩ সালের ৭ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আব্দুল মোতালেব ও সাধারণ সম্পাদক হন কুতুব উদ্দিন চৌধুরী।
২০১৩ সালের ৭ জুলাই সম্মেলনে চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে জাহাঙ্গীর চৌধুরী সভাপতি ও আবু আহমদ চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এসব কমিটি মেয়াদোর্ত্তীর্ণ হলেও পটিয়া, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় নিয়মিত কমিটি আছে।