বহুল আলোচিত এবং প্রশাসনের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি ইয়াবা ডন হাজী সাইফুল করিম (৪৫) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাত ১টার দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীরের শেষপ্রান্তে নাফ নদীর পাড়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সাইফুল নিহত হন।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৯টি এলজি, ৪২ রাউন্ড শর্টগানের তাজা কার্তুজ, ৩৩ রাউন্ড কার্তুজের খোসা এবং ১ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস জানিয়েছেন, কয়েকদিন পূর্বে ইয়াবার একটি বড় চালান ইঞ্জিনচালিত বোটযোগে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীরের শেষপ্রান্তে নাফ নদীর পাড়ে এনে মজুত করা হয়। এর আগে গ্রেপ্তার সাইফুল করিম পুলিশকে এসব তথ্য দেয়।
ওসি জানান, তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইয়াবা উদ্ধারের জন্য বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে উক্ত স্থানে পৌঁছলে সাইফুল করিমের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ৫২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এসময় পুলিশের ৩ সদস্য আহত হন। সাইফুল করিমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি আরো জানান, সাইফুল করিম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার তালিকার ১নং ইয়াবা গডফাদার এবং বাংলাদেশের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।
তিনি টেকনাফ থানার মামলা নং-১৪, তাং-০৫/০৫/২০১৯, ধারা-১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯-A এবং মামলা নং-১৫, তাং- ০৫/০৫/২০১৯ ধারা- ২০১৮ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১০(গ)/৪১ এর পলাতক আসামি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
সূত্র জানায়, টেকনাফে প্রথম দফায় ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করার পর সাইফুল করিম আত্মসমর্পণের জন্য যোগাযোগ করেন। দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে সাইফুল করিমেরও নাম ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় এক ইয়াবা সম্রাটের পতন হলো।
দেশে ইয়াবাবিরোধী অভিযানের পর গা ঢাকা দেয় মোস্ট ওয়ান্টেড হাজি সাইফুল করিম। আশ্রয় নেন সীমান্তবর্তী দেশ মিয়ানমারে। গত ২৫ মে তাকে ইয়াঙ্গুন থেকে কৌশলে দেশে আনা হয়।
অল্প সময়ের মধ্যে ইয়াবা ডন
সাইফুল করিমের ইয়াবা ব্যবসার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ছড়ানো ছিল টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত। ঘাটে ঘাটে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতেন। বিনিময়ে তার ‘সেফগার্ড’ হিসেবে কাজ করতেন সুবিধাভোগী প্রভাবশালীরা।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিলবনিয়াপাড়া গ্রামের ডা. হানিফের ছেলে সাইফুল করিম মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই ব্যবসায় সফল হন। ২০১৭ সালে পান ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সিআইপি পদবী।
মাত্র এক যুগের ব্যবধানে সাইফুল হয়ে ওঠেন শত কোটি টাকার মালিক। অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর এই ফুলেফেঁপে ওঠা আলাদিনের চেরাগের নাম ইয়াবা।
সূত্র জানায়, টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির পাঁচ ভাই ও আত্মীয়দের বাইরে একমাত্র সাইফুলেরই ছিল নিজস্ব ইয়াবা সিন্ডিকেট। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএসসি) ও গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় দেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবার ডিলার ছিলেন এই সাইফুল করিম।
কক্সবাজারের ব্যয়বহুল এলাকা কলাতলী পয়েন্টে হোটেলও নির্মাণ করেছেন তিনি। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বিস্তৃত তার ব্যবসা। টেকনাফের বাসিন্দা হলেও বাস তার চট্টগ্রামে। এসকেজি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তিনি। গার্মেন্ট, আমদানি-রপ্তানি, কার্গো ও জাহাজের ব্যবসা রয়েছে তার। চট্টগ্রাম শহরের কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারে রয়েছে তার একাধিক অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট।
জানা গেছে, মিয়ানমারের মংডুর প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে দেশে সরাসরি ইয়াবার চালান নিয়ে আসার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছিল সাইফুলের। আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারিও বলা হতো তাকে।
২০০৭ সালেও সাইফুল করিম স্বল্প বেতনে একটি আড়তে কাজ করতেন।
জয়নিউজ/শামীম/আরসি