কর্ণফুলীর পাড়ঘেঁষে বিমানবন্দর সড়কের চেহারাই বদলে গেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সহযোগিতায় বৃহত্তর শিল্প গ্রুপ জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের অর্থায়নে নান্দনিক হয়ে উঠেছে বিমানবন্দর সংলগ্ন ভিআইপি সড়ক।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সড়কে উঠতেই আগন্তুকরা দেখতে পাবেন পাহাড়-নদী আর সমুদ্রঘেরা চট্টগ্রামকে। দেখা যাবে নানা ধরনের সারি সারি ফুলের গাছ। গাছে গাছে ফুটেছে হরেক ফুল। পাখপাখালির ঝাঁক। পাখির কূজনে চারপাশ মুখরিত। সবুজে-শ্যামলে নিজস্ব রূপে সেজেছে প্রকৃতি। সড়কের মাঝখানে লাগানো হয়েছে নানা রকমের ফুল-ফল আর ওষুধি গাছ।
সড়কে রয়েছে তিনটি সেতু। সেতুর ওপর আলোকসজ্জা মুগ্ধ করছে দেশি–বিদেশি পর্যটকদের। ফুটপাতের পাশে বাহারি ফুলের সমাহার। এখানে দেশ–বিদেশের অতিথিদের স্বাগত জানাবে দৃষ্টিনন্দন তিনটি ম্যুরাল। এগুলো হলো নৌকার ওপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীনের ছবি।
বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসৈকত, সবুজ পাহাড় আর কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রামের বৈশিষ্ট্য। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলো পুরোপুরি নান্দনিক শৈলীতে বিমানবন্দর সড়কের মিডল আইল্যান্ড এবং ফুটপাতে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে সমুদ্রের ঢেউ, উঁচু-নিচু পাহাড়ের বুকে সবুজ গাছপালা এবং শান্ত-শীতল জলধারায় বহমান কর্ণফুলী নদীকে উপস্থাপন করা হয়েছে সড়কের আইল্যান্ড ও ফুটপাতে। ফুল-ফলের শৈল্পিক বনায়ন সড়কের দুই পাশে। রাতের সৌন্দর্যে চট্টগ্রামকে উপস্থাপনে স্থাপন করা হয়েছে নিয়ন বাতি। নিয়ন আলোয় ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। রাতে কিংবা দিনে যে কেউ এ সড়কে চট্টগ্রামের অপরূপ সৌন্দর্যে হচ্ছেন মুগ্ধ।
সময় কাটানোর জন্যে এখানে আসেন অনেকে। কেউবা আসেন হাঁটতে। এ পথ ধরে হাঁটতে আসেন কাটগড় এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী। তিনি জয়নিউজকে বলেন, এখানে হাঁটতে আসার প্রধান কারণ হচ্ছে, এখানে তাপমাত্রা অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক কম। চারিদিকে ফুলের গাছ। দেখতে খুব ভালো লাগে। প্রকৃতি আমাকে খুব টানে। নিজেকে সবসময় প্রকৃতির মাঝে রাখতে চাই। রাস্তায় নেই কোনো ময়লা-আবর্জনা।
দেখা গেল, কয়েকজন তরুণ মোটরসাইকেল থামিয়ে সড়কের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। তাদের একজনের নাম মো. জহির উদ্দীন মোবারক। জয়নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, এখানে গাড়ি থামিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। সড়কটি আগের চেয়ে অনেকটা বদলে গেছে। মনোরম পরিবেশ। তাই এখানে বসে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছি।
প্রবাসী জাহেদুল হক বলেন, আমি তিন বছর পর পর দেশে আসি। এবার বিমানবন্দর সড়ক দেখে অবাক হলাম। আগের চেয়ে অনেক সুন্দর।পুরো সড়কের চেহারা বদলে গেছে। বিমান থেকে নেমে এই পথ ধরে যখন গাড়িতে করে আসছিলাম, মন ভরে গেছে। কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি প্রকৃতির মাঝে। আসলে বাংলাদেশ অনেক উন্নত হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ জয়নিউজকে বলেন, এই বিমানবন্দর সড়ক বদলে দেওয়ার মূলনায়ক হচ্ছেন ক্লিন ও গ্রিন সিটির রূপকার সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তাঁর ম্যাজিকে অপরূপ হয়ে সাজছে নগর। তাঁর নির্বাচনি অঙ্গীকার ক্লিন ও গ্রিন ধীরে ধীরে বাস্তবরূপ নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মেয়র নাছির জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরকে ক্লিন ও গ্রিন সিটির রূপ দেওয়া ছিল আমার অঙ্গীকার। আমি এই মহানগরকে পরিচ্ছন্ন এবং নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলতে চাই। এটা বাস্তবায়নে আমি নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। এর অংশ হিসেবে জিপিএইচ ইস্পাতের উদ্যোগে বিমানবন্দর সড়কের তিন কিলোমিটার অপরূপ সাজে সজ্জিত করে তোলা হয়েছে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পিটুপি থ্রি সিক্সটি।
প্রসঙ্গক্রমে মেয়র বলেন, ২০১৫ সালের ২২ আগস্ট থেকে নগরের সৌন্দর্যবর্ধনে নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ ভিশন বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। মেয়াদকালের মধ্যেই চট্টগ্রামকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক নগরে উন্নীত করার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন মেয়র নাছির।
জয়নিউজ/আরসি