হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অবহেলায় মো. শাহাজাহান (৪৮) নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রোববার (৩০ জুন) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় হাসপাতালে কর্মরত ২ কনসালটেন্ট, ১ মেডিক্যাল অফিসার ও ১ দাপ্তরিক সহকারীর সমন্বয়ে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে পৌরসভার আদর্শ গ্রামের মো. আক্কাস মোল্লার ছেলে মো. শাহাজাহান পেটে ব্যথা অনুভব করলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি করান।
তবে রাতে শাহাজানের অবস্থার অবনতি হলে তার স্বজনরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। এতে কোনো ফল না পেয়ে পরে তারা নিরুপায় হয়ে নার্সদের (সেবিকা) কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা পাননি। ফলে ভর্তির প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর রোববার দুপুর ১২টার দিকে শাহাজান মারা যান।
স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকের অবহেলার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিতে না পারায় তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ছেলে জাকির হোসেন জয়নিউজকে বলেন, শনিবার দুপুরে বাবা অসুস্থতা অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। বাবাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক স্যালাইন ও দুটি ইনজেকশন দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে বাবা খাওয়া-দাওয়া করে। রাতে হঠাৎ আবারও বুকের ব্যথা বেড়ে যায় এবং পেট ফুলে যায়।
তিনি আরও জানান, রাত ১টার দিকে বাবা ব্যথায় ছটপট করতে থাকলে প্রথমে ডিউটিরত নার্সদের চিকিৎসককে ডাকতে বলি। এদিকে চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে বাবার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে আমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডা. সুমন সেনের শরণাপন্ন হই।
এসময় তাকে (চিকিৎসক) আমাদের রোগীকে দেখার জন্য বারবার অনুরোধ জানানোর পরও তিনি টেলিভিশন (টিভি) দেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আগামীকাল (রোববার) সকালে বাবাকে দেখবেন বলে জানান।
এতে কোনো ফল না পেয়ে পরে আমরা নিরুপায় হয়ে নার্সদের কাছে গেলে তারাও হুমকি-ধমকি দিয়ে বলেন যে, আমরা রোগী দেখব। তোমাদের এত বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।
এসময় নার্সদের সঙ্গে চিৎকার-চেঁছামেছি করলে সব নার্স একত্রিত হয়ে ডাক্তারকে খবর দেয়। বাধ্য হয়ে ডাক্তার রোগীকে দেখে আবারও স্যালাইন ও দুটি ইনজেকশন পুশ করেন।
রোববার সকাল ১১টার দিকেও কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় একটা আলট্রা করতে বললে তারা রোগীকে নিয়ে দ্রুত পৌর সদরের আলিফ হাসপাতালে আলট্রা করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। তার কিছুক্ষণ পরই রোগী শাহাজাহান হাসপাতালে মারা যান।
এদিকে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নিহতের স্বজনরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত নার্স ও ডাক্তারকে হাসপাতালে হামলা ও ঘেরাও করার চেষ্টা করে।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানান হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বেলাল উদ্দীন জাহাঙ্গীর।
তিনি আরও জানান, পরে বিকেলে স্বজনরা লাশ দাফনের জন্য নিহতের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুমন সেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয় এমনটা দাবি করে তিনি বলেন, ওই রোগীকে আমি নিজে উপস্থিত থেকে চিকিৎসা বাবদ প্রয়োজনীয় সকল রকমের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। রাতে আমাকে ডাকার পর আমি রোগীকে দেখে উনার ছেলেদের কয়েকটি পরীক্ষা করতে বলি।
চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প. প. কর্মকর্তা ডা. আবু সৈয়দ মো. ইমতিয়াজ হোসাইন। তিনি আরও জানান, রোগীর ডায়াবেটিস, লিভারের সমস্যা ছিল। সে কারণে মারা যেতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো অবহেলা করা হয়নি। রোগীকে বাঁচানোর সবধরনের চেষ্টা আমরা করেছি। তবুও এ ঘটনায় চিকিৎসক ও নার্সদের দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিল কি-না তা জানতে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাইকে প্রধান করে গঠন করেছে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি। ওই কমিটি আগামী ৪ কর্মদিবসের পর এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তারা তাদের রিপোর্ট পেশ করবে।
তবে এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জয়নিউজকে জানান, বিষয়টি আমি অবগত আছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত কমিটির তদন্ত কমিটির রির্পোট আগে আমি দেখব। এতে যদি আমি সন্তুষ্ট না হই তবে ফের অন্য উপজেলার চিকিৎসক দিয়ে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করব।
জয়নিউজ/বিআর