চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চলমান সব উন্নয়ন প্রকল্পে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তাদেরকে প্রকল্প এলাকায় বাধ্যতামূলকভাবে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
রোববার (২১ জুলাই) সকালে সিটি করপোরেশনের ৪৮তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতি তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দেয়। স্বচ্ছতা ও কাজের গুণগতমান নিশ্চিত হয়। তাই চসিক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ তার নিচের সকল কর্মকর্তাদের প্রকল্পস্থানে অবস্থান করতে হবে।
সিটি মেয়র আরো বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের মাসব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করার দিকনির্দেশনা দেন মেয়র। আসন্ন ঈদুল আযহা উদযাপনে সরকারের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন নগরের কোরবানি পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ঈদের দিন বিকাল ৪ টার মধ্যে পুরো নগরে কোরবানীর দিন জবাইকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণ এবং ঈদের পরের দিন শেষ রাত পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণের লক্ষে ৪১টি ওয়ার্ডকে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম-৪টি জোনে বিভক্ত করে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৪টি ‘উপ-কমিটি’ এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়েছে। ঐদিন পরিচ্ছন্ন বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়।
বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিশ্চিতকল্পে কোরবানি ঈদের দিন সকাল ৯ টার মধ্যে দায়িত্বে নিয়োজিত স্থায়ী ও অস্থায়ী পরিচ্ছন্ন কর্মীদের স্ব-স্ব ওয়ার্ডে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ সমস্ত কার্যক্রম ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা তদারকি করবেন। ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রসঙ্গে চসিক মেয়র বলেন, অদ্যাবধি চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। একবার এই ডেঙ্গু রোগ দেখা দিলে মহামারী আকারে ধারণ করবে বলে তিনি সকলকে সতর্ক করে দেন।
তিনি আরো বলেন, বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র। বাসাবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা, ফুলের টব, ছাদ, ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যাতে পানি না জমে সেদিকে নজর রাখতে তিনি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১৫ জুলাই ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রতিদিন ১৬১ জন কর্মী নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে ও বিভিন্ন স্থানে ওষুধ ছিটাচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ। প্রতিটি ওয়ার্ডের ঝোপঝাড় পরিস্কার ও নালা-নর্দমায় যেখানে মশা বংশবিস্তার করে, সেখানেও ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এ সব বহুমুখী কর্মসূচির কারণে মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গুর প্রকোপ নেই চট্টগ্রামে।
তিনি বলেন, পরিচ্ছন্ন বিভাগের সক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশী। এ সময় তিনি পরিচ্ছন্ন বিভাগের ওয়ার্ডওয়ারী পরিচ্ছন্নকর্মীদের তালিকা সভায় তুলে ধরে বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে বিগত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ কর্মী বেশী আছে। এখন কর্মীর স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে পার পাওয়া যাবে না। সিটি মেয়র বলেন, আপনাদের সুপারিশে এসব পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। আপনারা তাদেরকে চাকরি দিয়েছেন, চাকরি রক্ষার দায়িত্ব তাদের। তাদের নিকট থেকে কড়াগন্ডায় কাজ আদায়ের জন্য কাউন্সিলরদেরকে আরো আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান মেয়র।
এ প্রসঙ্গে তিনি নগরের রাস্তায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ যেন দেখা না যায়, সে ব্যাপারে চসিক প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, চসিকের সুনামকে ম্লান করার জন্য একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। এ চক্রটি বাইরের ময়লা এনে নগরে ফেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ-প্রচার চালাচ্ছে। এই কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন সিটি মেয়র।
সভায় চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত মেয়র গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে নগরের ৪১টি ওয়ার্ড থেকে বয়সভিত্তিক নিজস্ব খেলোয়াড় বা বাইরে থেকে খেলোয়াড় সংযুক্ত করার বিষয়ে কাউন্সিলরদের মধ্যে বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে অবহিত করার জন্য আহ্বান জানান মেয়র।
সভায় অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন, নগরের কমিউনিটি সেন্টারগুলোকে ট্যাক্সের আওতায় আনা, সবুজ মেলার আয়োজন, ঈদ জামাত ও মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশের আয়োজন, অতি বৃষ্টিতে নগরে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার জরিপ, আয়বর্ধক প্রকল্প ও ২৪ জুলাই আরাকান সড়কের উদ্বোধন সম্পর্কে আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
এছাড়া সভায় অর্থ ও সংস্থাপন, বর্জ্য, শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য রক্ষা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নগর অবকাঠামো নির্মাণ ও সংরক্ষণ,আইন শৃঙ্খলা,পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, যোগাযোগ, দারিদ্র হ্রাসকরণ ও বস্তি উন্নয়ন, নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন,পরিবেশ উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, হিসাব নিরীক্ষা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, পানি ও বিদ্যুৎ, সমাজকল্যাণ ও কমিউনিটি সেন্টার, স্ট্যান্ডিং ও নামকরণ উপ- কমিটির চেয়ারম্যানরা স্ব-স্ব কমিটির কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন।
সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেমসহ নগরের সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন চসিক সচিব আবু সাহেদ চৌধুরী।