সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনলাইন ও অ্যাপসভিত্তিক সেবাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতেই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন সিএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে শুধু অনলাইনভিত্তিক সেবাই নয়, নগরবাসীর জন্য সিএমপির পক্ষ থেকে পরিচালনা করা হয় অনেক ধরনের সেবা।
হ্যালো সিএমপি: অপরাধ দমনে পুলিশকে বিভিন্ন তথ্য, অভিযোগ ও পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে পুলিশি সেবা গ্রহণের জন্য ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ‘হ্যালো সিএমপি’ নামে একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস চালু করে সিএমপি। অ্যাপসটিতে ৬টি ক্যাটাগরি আছে।
এগুলো হলো- জঙ্গিবাদ/উগ্রবাদ, মাদক, বোমা/বিস্ফোরক/অস্ত্র, আন্তঃদেশীয় অপরাধ/সাইবার ক্রাইম, ওয়ান্টেড ও তথ্য কণিকা। প্রত্যেকটি ক্যাটাগরিতে ঢুকলে অপরাধের তথ্য, বিভাগ, জেলা, থানা, তথ্যদাতার পরিচয়, প্রদত্ত তথ্য সংক্রান্ত কোনো ছবি, ভিডিও বা অডিও থাকলে সংযুক্ত করুন এবং সবশেষে সাবমিট অথবা বাতিল লেখা ট্যাব আছে।
এ অ্যাপসটি ব্যবহার করে নগরের সাধারণ মানুষ আশপাশের যেকোনো অপরাধের তথ্য সিএমপিকে জানাতে পারে। সিএমপিও অপরাধের ধরন বুঝে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
কমিউনিটি পুলিশিং: কমিউনিটি পুলিশিং হচ্ছে অপরাধমূলক সমস্যা সমাধানে পুলিশ ও জনগণের যৌথ অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার একটি নতুন পুলিশিং দর্শন। পুলিশি কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকরভাবে অপরাধ প্রতিরোধের জন্য কমিউনিটি পুলিশিং ধারণা গ্রহণ করা হয়েছে।
কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থায় কমিউনিটির সদস্য, সমাজের বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পুলিশের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অপরাধ প্রতিরোধ ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এটি মূলত একটি প্রতিরোধমূলক পুলিশি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় অপরাধের কারণগুলো অনুসন্ধান করে সেগুলো দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পুলিশ সাধারণ মানুষকে নিজ নিজ এলাকার অপরাধ প্রতিরোধের জন্য আইনি পরামর্শ দেয়। একইসঙ্গে অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করা, অপরাধকর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বা পরামর্শ দেওয়াও এই সেবার অন্তর্ভুক্ত। নগরের মানুষকে এমন অনেক সেবা দিতে সিএমপির আছে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের একটি শক্তিশালী ইউনিট।
আইনি সহায়তা: সিএমপির পক্ষ থেকে ফৌজদারি অপরাধের শিকার ব্যক্তিকে নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। এজন্য ভিকটিমকে তার সমস্যার কথা জানাতে সিএমপিতে যোগাযোগ করতে হয়। এক্ষেত্রে সিএমপির সদস্যরা ফৌজদারি মামলার শিকার ভিকটিমদের পরামর্শও দিয়ে থাকে।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা: কোনো কারণে কেউ যদি অনিরাপদ বোধ করে এবং সেটির পিছনে উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারে তাহলে সিএমপি ওই ব্যক্তিকে নিরাপত্তা প্রদান করে।
নগদ টাকা বহনে নিরাপত্তা: নগদ টাকা বহন ও হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি সিএমপির কাছ থেকে সাহায্য চায়, তাহলে সিএমপি নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সিএমপির হটলাইন ০১৬৭৬-১২৩৪৫৬ ও ০১৬৭৯-১২৩৪৫৬ এ ফোন করে সেবা চাইতে হয়।
অগ্নিকাণ্ডে নিরাপত্তা: হঠাৎ শহরের কোথাও আগুন লাগলে সেক্ষেত্রেও নগরবাসী তাদের কাছের পুলিশ স্টেশনে ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন। তখন সংশ্লিষ্ট থানা থেকে নিকটতম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এক্ষেত্রেও সিএমপির হটলাইন ০১৬৭৬-১২৩৪৫৬ ও ০১৬৭৯-১২৩৪৫৬ নাম্বারে ফোন করতে হয়।
চুরি যাওয়া গাড়ি উদ্ধার: এটি সিএমপির একটি সাম্প্রতিক অনলাইন সেবা। কারো গাড়ি যদি চুরি যায় এবং তিনি যদি নিকটস্থ থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন, তাহলে গাড়িটি উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির মালিকের কাছে এসএমএস চলে যায়।
সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি: নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থা করেছে সিএমপি। নগরের ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে এজন্য একটি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
সিএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ (উত্তর ও বন্দর) নগরের যানজট নিয়ন্ত্রণ ও গাড়ি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম জয়নিউজকে বলেন, অনলাইন ও জরুরিভিত্তিক বিভিন্ন সেবা চালু করে পুলিশ এখন জনগণের আরো কাছে চলে এসেছে।
তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে এখন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে পুলিশ। ফলে অপরাধের মাত্রা ও শহরের যানজট অনেক কমে এসেছে। ভবিষ্যতেও পুলিশের এ ধরনের সেবা অব্যাহত থাকবে।