সারা দেশে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে মশাবাহিত প্রাণঘাতী এই রোগটিতে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
ডেঙ্গু জ্বরাক্রান্তদের প্লাটিলেট দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক কিছু উপায় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেঁপে পাতার রস। নতুন একটি গবেষণায় জানা গেছে, পেঁপে পাতার রস পান করা প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়ানোর সহজতম একটি উপায়।
গবেষণায় দেখা গেছে পেঁপে পাতার রসে থ্রম্বোসাইটিস বা প্লাটিলেট উৎপাদনে সক্ষম এমন উপাদানের পরিমাণ বেশি। গবেষণাটি পরিচালনা করেন মালয়েশিয়ার এআইএমএসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর এস. কাঠিরেসান।
তিনি জানান, ডেঙ্গুর মধ্যে যে ভাইরাস রয়েছে তা মূলত মানব দেহে রক্তের প্লাটিলেট কমিয়ে দেয়। সাধারণত প্লাটিলেটের জীবনকাল ৫ থেকে ১০ দিন। এই সময়ের মধ্যে আবার নতুন করে প্লাটিলেট উৎপন্ন হয় শরীরে। শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এটি। কিন্তু ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস এই প্রক্রিয়াটিকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে দ্রুততায় কমতে থাকে প্লাটিলেটের সংখ্যা।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তে স্বাভাবিক প্লাটিলেটের পরিমাণ প্রতি মাইক্রো লিটারে দুই লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ। গবেষকদের মতে, প্লাটিলেট লেভেল এক লাখের কম হয়ে গেলে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে একজন মানুষের জন্য। প্লাটিলেটের পরিমাণ যদি ৫০ হাজারে নেমে আসে তাহলে থ্রমবোসাইটোপেনিয়া হয়ে যায়। ফলে অনেক সময় রোগীর মৃত্যু হতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে বেশ কাজে দেয় পেঁপে পাতার রস।
গবেষণায় জানা গেছে, ডেঙ্গুর ভাইরাস শরীরে যতদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে ততদিন পর্যন্ত নতুন প্লাটিলেট উৎপাদন কমে যায়। শরীরে নতুন প্লাটিলেট উৎপাদনের ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে ভূমিকা রাখে ডেঙ্গু ভাইরাস।
পেঁপে পাতার রসের কার্যকারিতা: পেঁপে পাতায় কিমোপাপিন ও পাপেইন নামে দুটি এনজাইম আছে। এই উপাদান দুটি প্লেটলেট উৎপাদন বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে। অতি পরিচিত এই গাছের পাতাটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সহায়ক হয়। এই বিষয়টি নিয়ে ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কান জার্নাল অফ ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান্স এ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন ডাক্তার সানাথ হেট্টিগ।
ডাক্তার হেট্টিগের গবেষণা থেকে জানা যায়, পেঁপে পাতায় পাপেইন এবং কিমোপাপেইন নামে দুটি অ্যানজাইম রয়েছে। এই উপাদান দুটি প্লাটিলেটের উৎপাদন বাড়ায় এবং রক্তকে জমাট বাঁধার হাত থেকে বাঁচায়। এছাড়াও পেঁপে পাতায় প্রচুর পরিমাণে কমপ্লেক্স ভিটামিন রয়েছে যা বোন ম্যারোকে প্লাটিলেট উৎপাদনে সহায়তা করে।
যেভাবে পান করতে হবে:
সানাথ হেট্টিগের গবেষণায় জানা গেছে, পেঁপে পাতার রস পান করতে মোটামুটি কচি পাতা গুলো উপযোগী। এই পাতা ভালোমতো ধুয়ে বেটে নিতে হবে। এরপর হামান দিস্তায় ছেঁচে কিংবা ব্লেন্ডারে দিয়ে রস করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এর সাথে কোনো চিনি বা লবণ যেন মেশানো না হয়। প্রাপ্ত বয়স্করা ৮ ঘণ্টার বিরতিতে দিনে দুবার পেঁপে পাতার রস পান করতে পারেন। ৫ -১২ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে ৫ মিলি লিটার পরিমাণ এবং ৫ বছরের কম বয়সীদের ২.৫ মিলি লিটার পেঁপে পাতার রস পান করা যেতে পারে।
জয়নিউজ/পিডি