হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে সর্ব উত্তরের ফরহাদাবাদ ইউনয়িনের জনপদের নাম ‘মাহমুদাবাদ’। প্রায় তিন হাজার পরিবার সমৃদ্ধ ওই জনপদের অবস্থান মাহমুদাবাদে।
সেখানে যুগ যুগ ধরে এলাকার জনসাধারণ সরকারি নানা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসলেও গ্রামের ৮নং মাহমুদাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থা ছিল বেশ নাজুক। দিনদিন কমছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যা। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা শুধুমাত্র ১৫৭ জন। শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র প্রধান শিক্ষকসহ চারজন।
প্রায় ৯০ বছর আগে ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত মাহমুদাবাদ গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সময়ের ব্যবধানে ১৯৮৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রথমবারের মত একটি পাকা দালান পেয়েছিল। তবে বিগত ২০১৫ সালে উক্ত ভবনটি জরাজীর্ণ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলা হয়।
পুরাতন ভবন ভেঙে ফেলার পর চার বছর আগেও নতুন দোতলা ভবন এবং বিদ্যালয়টি প্রাথমিক থেকে জুনিয়র বিদ্যালয় করার বার বার আশ্বাস দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তা এ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
এরপর থেকে একটি পাকা এবং দুটি অস্থায়ী শেডের মত মোট তিনটি কক্ষ নিয়ে কোনোরকমে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথা প্রধান শিক্ষক মোছাম্মৎ নাছিমা আক্তারের নেতৃত্বে তিন শিক্ষক।
কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই টিনের ফুটো চালা গড়িয়ে পানি পড়ে বিদ্যালয়ের অস্থায়ী শেডের শ্রেণিকক্ষে। ফলে দুটি শ্রেণিকক্ষ সর্বদা কর্দমাক্ত হয়ে পড়ত। সেই কাদায় শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ পা পিছলে পড়ে আহতও হয়েছে বেশ কয়েকবার।
এছাড়া কর্দমাক্ত শ্রেণিকক্ষ দুটি বাদ দিলে পাঠদানের জন্য ও শিক্ষার্থীরা বসার উপযুক্ত শ্রেণিকক্ষ ছিল মাত্র একটি। বাকি দুটো অস্থায়ী শেড ছিল জরাজীর্ণ, টিনের বেড়া, জায়গায়-জায়গায় ভাঙা, ভাঙা জানালাও। এরকম শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণে আগ্রহ ছিল কম, ক্লাসে আসতে চাইতো না তারা।
এমতাবস্থায় সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে উক্ত কর্দমাক্ত শ্রেণিকক্ষের ছবি তুলে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিনকে পাঠান একজন সচেতন শিক্ষক। মেসেজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিদ্যালয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন ইউএনও। এরপর ইউএনওর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ ২০ দিন টানা চলতে থাকে শ্রেণিকক্ষ দুটির সংস্কারকাজ। পরিপাটি, মানসম্মত এবং শিক্ষার্থীদের ব্যবহার উপযোগী করে শ্রেণিকক্ষ দুটি গড়ে তোলা হয়।
কয়েকদিন আগে উক্ত বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ দুটি কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এমনটা নিশ্চিত করে ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) শ্রেণিকক্ষ দুটি বাচ্চাদের পাঠদানের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এতে দুই লাখেরও বেশি টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং উপজেলা প্রশাসন এ ব্যয় বহন করে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ইউপি সদস্য মো. বেলাল উদ্দিন চৌধুরী এবং প্রধান শিক্ষক মোছাম্মৎ নাছিমা আক্তার ও মুঠোফোনে এ জয়নিউজকে জানান, জরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষ সংস্কারের পর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছে। এখন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও আগের চাইতে অনেক বেশি। তারা (শিক্ষার্থী) নতুন পরিপাটি এবং মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ পেয়ে মহাখুশি।