পেঁয়াজের ‘সন্তোষজনক’ মজুদ থাকার পরও কিছু অসাধু আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্টদের কারসাজিতে লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার।
সিন্ডিকেটের কারসাজিতে মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকায় কেনা পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। একইভাবে ভারতের পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে চড়া দামে।
এদিকে কেউ বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন। কিন্তু তাতেও কমেনি অস্থিরতা।
খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পেঁয়াজের আড়তদাররা গোডাউনে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ থাকার পরও চাহিদা মোতাবেক পেঁয়াজ দিচ্ছে না খুচরা বিক্রেতাসহ সাধারণ ক্রেতাদের । পেঁয়াজের অপার্যপ্ততা দাবি করে তারা দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগও করেছে কয়েকজন ক্রেতা।
বাজারে আসা কয়েকজন ক্রেতা আক্ষেপ করে জানান, সবকিছুতেই মাশুল গুণতে হয় ক্রেতাদের। অভিযানের পর পেঁয়াজের দাম কমছিল কিন্ত গত কয়েকদিন দাম অনেক বেশি। আড়তদাররা বলছে, পেঁয়াজের স্টক কম। কিন্তু প্রতিদিন পেঁয়াজ আসছে। আমাদের আবেদন দাম নাগালের মধ্যে রাখতে কর্তৃপক্ষ যেন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
খাতুনগঞ্জের কিছু ব্যবসায়ীর দাবি, মিয়ানমার থেকে বস্তাভর্তি আমদানি করা পেঁয়াজের বেশিরভাগ নষ্ট। তাই বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে খাতুনগঞ্জের কয়েকটি আড়তের সামনে দেখা গেছে নষ্ট পেঁয়াজের বস্তা ফেলে রেখেছে মালিকরা। তবে ভিতরের চিত্র একদমই ভিন্ন। নষ্ট পেঁয়াজের বস্তার অজুহাত দিয়েই তারা গোডাউন ভর্তি করে রেখেছে পেঁয়াজের বস্তা। আর এ সুযোগে দাম বাড়াচ্ছে তারা।
এদিকে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে পরিচালিত জেলা প্রশাসনের অভিযানেও উঠে আসে একই চিত্র। পেঁয়াজের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে রয়েছে অসামঞ্জস্যতা। যেখানে মিয়ানমারের পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য ৪২ টাকা, সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। একইচিত্র ভারতের পেঁয়াজও। এক্ষেত্রেও অজুহাত নষ্ট পেঁয়াজের।
অভিযানে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের আড়তদার মেসার্স নিউ শাহ আমানত ও মেসার্স আজমীর ভাণ্ডারকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া অভিযানে বেশ কয়েকটি দোকানে পেঁয়াজের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য খতিয়ে দেখেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসন বলছে, গত ৩ তারিখের অভিযানের পর খাতুনগঞ্জসহ সারাদেশে পেঁয়াজের দাম কমেছিল। পেঁয়াজের পর্যাপ্ত যোগান তখনও ছিল, এখনও রয়েছে। কিন্তু অসাধু আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্ট সিন্ডিকেট করে বাজারে অস্থিরতা করছে। তারা অভিযানের খবর পেয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু তাদের নাম জেলা প্রশাসনের হাতে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে জয়নিউজকে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসন অসাধু কমিশন এজেন্ট সিন্ডিকেটে জড়িত কয়েকজনের নাম পেয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন কায়সার, ইয়াকুব ও রফিক।
এছাড়া আরো কিছু অসাধু আমদানিকারক সিন্ডিকেট এজেন্টের নাম পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যাদের তথ্য গোয়েন্দা বিভাগকে পাঠানো হয়েছে।
অভিযানের আগে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পেঁয়াজের আড়তদাররা গোডাউনে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ থাকার পরও চাহিদা মোতাবেক পেঁয়াজ দিচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতাসহ সাধারণ ক্রেতাদের । পেঁয়াজের অপর্যাপ্ততা দাবি করে তারা দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ক্রেতা।
এদিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা গুনা খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের আড়তদার মেসার্স নিউ শাহ আমানতের ম্যানেজার জহির উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, দাম বাড়ানোর সঙ্গে আমাদের কোনো হাত নেয়। আমরা কমিশন এজেন্ট কায়সার থেকে পেঁয়াজ আনি। তারা কমিশনের মাধ্যমে আমাদের কাছে পেঁয়াজ সাপ্লাই দেয়। তাই আমরা সব হিসাব করে দুই-এক টাকা লাভে বিক্রি করি। আমাদের জরিমানা বা ব্যবস্থা নিলে তো হবে না। কমিশন এজেন্টদের ধরতে হবে।
খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস জয়নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ২০০ থেকে ২৫০ জন আড়তদার আছেন, যারা স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ কমিশনে বিক্রি করেন। ভারত থেকে চট্টগ্রামের কোনো ব্যবসায়ী সরাসরি পেঁয়াজ আমদানি করেন না। ফলে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা যে দরে পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেন, সেই দরেই আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হই।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট তৌহিদুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, আমরা কয়েকজন ক্রেতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়েছি। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকার পরও কিছু অসাধু সিন্ডিকেট এজেন্ট দাম বাড়াচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অভিযানে আমরা সব আডতদার ও ব্যবসায়ী সমিতিকে পুনরায় সতর্ক করেছি। ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়নিউজ/বিআর