মহামারি করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দেশের স্বাস্থ্যসেবার চলমান বেহাল অবস্থায় সাধারণ মানুষের মাঝে দিন দিন অসহায়ত্ব বাড়ছে। এমন সময়ে আশার আলো জেগেছে ফটিকছড়ির বাসিন্দাদের মনে। বৃহত্তর এ উপজেলায় স্থানীয়দের দানের টাকায় গড়ে উঠছে কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল। যা দেশে উপজেলা পর্যায়ে গড়ে উঠা প্রথম এবং একমাত্র কারোনা হাসপাতাল।
ইতোমধ্যে হাসপাতালের অধিকাংশ কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী ২৭ জুলাই এটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে বিরামহীন কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় সাত লাখ মানুষের বসবাস বৃহত্তর ফটিকছড়িতে। করোনাকাল শুরু হলে এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক বাড়তে থাকে। ফলশ্রুতিতে ৮ জুন স্থানীয় সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী উপজেলা সদর বিবিরহাটে অবস্থিত ২০ শয্যা হাসপাতালটিকে কোভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তরের উদ্যোগ নেন। সরকারের তিনতলা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ২০০৭ সালে নির্মাণের পর থেকে জনবল নিয়োগ না হওয়ায় অচল ছিল। পরিত্যক্ত এ হাসপাতাল ভবনটি সংস্কার করে সম্পূর্ণ কোভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তরে কোটি টাকার প্রয়োজন দেখা দেয়।
বিশাল অঙ্কের এ অর্থ সংগ্রহসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সায়েদুল আরেফিনকে প্রধান সমন্বয়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তিনি এ কোভিড হাসপাতাল গড়তে প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানের বিষয়ে স্থানীয়দের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এরপর থেকে আপামর জনগণ প্রতিদিনই নগদ অর্থ কিংবা বিভিন্ন উপকরণ-যন্ত্রপাতি সহায়তা দিয়েছেন। স্থানীয় সাংসদ থেকে শুরু করে দানশীল ব্যক্তি, বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা হাসপাতালটি গড়তে অনুদান দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন। চলমান বৈশ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাঁরা নিজেদের এলাকার কল্যাণে এগিয়ে এসেছেন।
এছাড়া এগিয়ে আসছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। অনেকে দান করছে নিজের টিউশনির টাকাও। অনুদান দিয়েছে অতি নিম্নআয়ের চা শ্রমিকরাও।
উদ্যোক্তারা জানান, ৩০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতালটি গড়ে তোলা থেকে পরবর্তী ছয়মাস পরিচালনা বাবদ তিন কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের আপদকালীন ফান্ডে এ হাসপাতাল বাবদ অনুদানের টাকা এক কোটি ২৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এছাড়া ৭৫ লাখ টাকা মূল্যমানের মেডিকেল ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি অনুদান এসেছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ হাসপাতালটিতে থাকছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, হাই ফ্লু ন্যাসাল ক্যানুলাসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা। থাকবে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও।
রোগীদের চিকিৎসা দিতে থাকবেন ছয়জন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক, ১৫ জন নার্স এবং ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক।
২১ জুন স্থানীয়দের অর্থে অস্থায়ীভাবে হাসপাতালটি চালানোর অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ। ২৮ জুন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ এটি পরিদর্শন করে সন্তোষ জানিয়ে দানের টাকায় উপজেলা পর্যায়ে এমন হাসপাতাল গড়ে তোলা বিরল দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন এবং সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন।
এদিকে হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচও) নাবিল চৌধুরী আহ্বায়ক ও ডা. জয়নাল আবেদীন মুহুরীকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতাল বাস্তবায়নে সহায়তা করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আবু তৈয়ব ও ফটিকছড়ি পৌর মেয়র ইসমাইল হোসেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সায়েদুল আরেফিন জয়নিউজকে বলেন, ফটিকছড়ির লোকজন অত্যন্ত মানবিক। দলমত নির্বিশেষে সবাই এগিয়ে এসেছে বলেই এ বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে। এ হাসপাতাল গড়তে শুরু থেকে তারা যেভাবে সাড়া দিয়েছে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
প্রধান উদ্যোক্তা সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপি বলেন, মানবিক বোধ থেকে এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে এ উদ্যোগ নিয়েছি। বিশেষায়িত এ হাসপাতালে প্রতিমাসে আনুষঙ্গিক খরচ পড়বে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। যার পুরোটাই নির্ভর করছে বেসরকারি সহায়তা এবং জনগণের দানের টাকার উপর। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন সাংসদ।