হত্যা মামলা হয়ে গেল আত্মহত্যায় প্ররোচনা, রোজিনা রহস্যের শেষ কখন?

রোজিনা আক্তার। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর বাকলিয়ার বাবার বাড়িতে থাকতেন এক ছেলেকে নিয়ে। চলতি জীবনের পথে একসময় পরিচয় হয় একই এলাকার মাসুদ রানার সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম, অবশেষে ২০১৭ সালের আগস্টে আদালতে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে। স্বপ্নের ভুবনে থাকা রোজিনা তখনও ভাবেননি তার জন্য অপেক্ষা করছে কী ভয়ঙ্কর পরিণতি!

- Advertisement -

দিন গড়াতেই মাসুদ রানার আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে। মাসুদ রানা হয়ে যান নয়ন ভট্টাচার্য। বিয়ের সময় নাম-ঠিকানা যা দিয়েছিলেন সব ভুয়া। বিয়ের রেজেস্ট্রিতে রাঙ্গুনিয়ার ধামাইরহাটের সেকান্দরের ছেলে লিখলেও আদতে নয়ন রাউজানের পথেরহাট এলাকার স্বপন ভট্টাচার্যের ছেলে। আগেও বিয়ে করেছেন নয়ন। ওই ঘরে তার দুটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে রোজিনার।

- Advertisement -google news follower

এসব জানার আগেই বিভিন্ন অজুহাতে রোজিনার জমানো টাকাসহ তার পরিবার থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় নয়ন। তবে দমে যাননি রোজিনা। নিজের শেষ সম্বল ফিরে পেতে নয়নের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন।

এদিকে রোজিনাকে কাবু করতে সহযোগীদের নিয়ে ষড়যন্ত্র বুনে নয়ন। তবে নয়নের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। ইয়াবা দিয়ে রোজিনাকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ধরা পড়েন পুলিশের জালে। জেলে যাওয়া নয়ন কিছুদিন পর জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর টাকা দেওয়ার কথা বলে গত ২৭ জুলাই দুপুরে রোজিনাকে ডেকে নিয়ে যান তার বাসায়।

- Advertisement -islamibank

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে রোজিনার ছেলে তানজীমুল ইসলাম (১৮) জয়নিউজকে বলেন, আমার মা দুপুর আনুমানিক একটার দিকে প্রতারক নয়নের বাসায় যায়। কিছুক্ষণ পর নয়ন আমাকে ফোন দিয়ে জানাই আমার আম্মু টাকার জন্য হৈচৈ করছে, যাতে আমি একটু যাই। কিন্তু আমি তাকে জানাই এটা আপনাদের বড়দের বিষয়, আমি যাব না। পরে বিকাল ৫টার দিকে সে আবার আমাকে ফোন দিয়ে বলে দ্রুত যেন তার বাসায় যাই। গিয়ে দেখি, আমার মা তার ঘরের দরজার সামনে মাটিতে পড়ে আছে। আমি কারণ জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, রোদের মধ্যে বাসায় এসে চিল্লাচিল্লি করায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তখন আমি আমার নানীকেও ফোন দিয়ে নয়নের বাসায় ডেকে আনি। আমার মা তখন শোয়া অবস্থায় বমি ও পায়খানা করেছে। আমি ডাক্তার ডাকতে ও হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু নয়ন বিভিন্ন কথা বলে সময়ক্ষেপণ করে। এর মধ্যেই সে তার মা এবং প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে কৌশলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। রাত আড়াইটার দিকে সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিতে আমার আম্মুসহ আমাদের একটা ট্যাক্সিতে তুলে দেয় এবং সে মেডিকেলের ইমারজেন্সিতে থাকবে বলে জানায়। এরপর থেকে তার কোনো আর দেখা নেই। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই আমার মা মারা যায়। ডাক্তাররা আমাদের জানায়, তার পেটে বিষ ছিল। বিষক্রিয়ার আমার মা মারা গেছে। তখন আমরা বুঝতে পারি নয়ন আমার মাকে বিষ খাইয়ে মেরেছে। কারণ আম্মু তার বাসায় যাওয়ার পর আমাকে ও নানীকে বলেছিল, নয়ন তাকে পানি ও স্যালাইন দিয়েছিল।

হত্যা মামলা হয়ে গেল আত্মহত্যায় প্ররোচনা, রোজিনা রহস্যের শেষ কখন? |

এদিকে রহস্যজনক এ মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করতে গেলে ঘটে আরেক বিপত্তি। মামলার বাদী রোজিনা আক্তারের বোন বৃষ্টি আক্তার জানান, আমাদের বয়ান মতো মামলা রেকর্ড না করে পুলিশ নিজের মতো করে মামলা সাজিয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়ের করতে চাইলেও পরে দেখি সেখানে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা আমি জানতে পারি এক আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার পর।

পুলিশের তদন্তকারীর বিষয়ে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে রোজিনা বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মামলার কোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি সঠিক জবাব দেন না। অনেক রূঢ়ভাবে কথা বলেন। নয়ন এমইএস কলেজভিত্তিক এক রাজনৈতিক গ্রুপের পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। তার সহযোগীরাও সবাই সন্ত্রাসী। আমি ও আমার পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি।হত্যা মামলা হয়ে গেল আত্মহত্যায় প্ররোচনা, রোজিনা রহস্যের শেষ কখন? | 117747238 319466315963090 5342807495109498518 n

এ ব্যাপারে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. রাসেল জয়নিউজকে বলেন, প্রতারক নয়ন রোজিনাকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে গেছে। তাহলে একজন কি বিষ নিয়ে আত্মহত্যার জন্য কারো বাসায় যায়? কীভাবে পুলিশ এ মামলাটিকে আত্মহত্যা প্ররোচনা হিসেবে নিলো। এছাড়া বাসায় অভিযুক্ত নয়নের মা ও প্রথম স্ত্রী থাকলেও তাদের আসামি করা হয়নি, এটাও একটা বিষয়। নয়ন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, তার বিরুদ্ধে মাদক-প্রতারণার মামলা রয়েছে। তাহলে এটি স্পষ্ট, সঠিকভাবে আমার মক্কেলের মামলাটি গ্রহণ করা হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও বাদীকে অসহযোগিতা করছেন। হত্যা মামলা হিসেবে এটি রেকর্ডভুক্ত করতে শিগগির আদালতে আবেদন করা হবে।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক কারিমুজ্জামান। তিনি জয়নিউজকে বলেন, ময়নাতদন্তের পর রোজিনার মরদেহের ভিসেরা রিপোর্টের জন্য মামলা তদন্তে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে আসামিকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, ভিসেরা রিপোর্টে যদি হত্যা আসে তাহলে এটিকে হত্যা মামলায় রেকর্ড করা হবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না।

জয়নিউজ/পিডি

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM