মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম পাকিস্তানেই আছেন। করাচির অভিজাত এলাকা ক্লিফটনে সৌদি মসজিদের কাছে ‘হোয়াইট হাউস’ নামে যে বাড়িটি আছে সেটিই তার ঠিকানা। করাচির ডিফেন্স হাউসিং অথরিটির ৩০ নম্বর রাস্তায় ৩৭ নম্বর বাড়ি এবং নুরবাদে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাসাদোপম বাড়ির মালিকও দাউদ।
শনিবার (২২ আগস্ট) পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার।
ভারতে একাধিক জঙ্গি হামলা এবং ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের মূলে দাউদ রয়েছেন বলে অভিযোগ ভারতের। বহু বছর ধরে দিল্লি দাবি করে আসছে, পাকিস্তানের বাণিজ্যনগরী করাচিতেই আছেন দাউদ।
তবে পাক প্রশাসন বরাবরই এ দাবি অস্বীকার করে আসছে। পাকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যমের এ সংবাদের পর দাউদকে হাতে পেতে ভারত সরকার নতুন কৌশল নেবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, মূলত বিশ্বজুড়ে আর্থিক অপরাধ রুখতে নীতি তৈরি ও কার্যকর করে যে সংস্থা, সেই ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) চাপের কারণেই দাউদের বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানকে ২০১৮ সালে ধূসর দেশের তালিকায় রাখে এফএটিএফ। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে নিষ্ক্রিয় করার প্রশ্নে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তা ২০২০ সালের গোড়ায় জানাতে হবে বলে ইসলামাবাদকে জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। করোনা আবহে সেই সময়সীমা কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে সেই সময়সীমাও এখন শেষের দিকে। এফএটিএফর কালো তালিকাভুক্ত হলে অনেক আন্তর্জাতিক অনুদান পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে পাকিস্তানের।
এ কারণেই ব্যক্তি ও সংগঠন মিলিয়ে ৮৮টি নাম এফএটিএফ-কে জানিয়ে পাকিস্তান দাবি করেছে, এদের আর্থিক লেনদেনে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট পাক সরকার একটি নির্দেশিকায় বলেছে, দাউদের পাশাপাশি জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান হাফিজ সইদ, জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার এবং আল-কায়দার উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এদের গতিবিধির উপরে কড়া নজর রাখা হয়েছে। কড়াকড়ি বেড়েছে পাক তালিবানের উপরেও।
প্রশ্ন হলো, এই তালিকায় দাউদকে কেন জুড়ল পাকিস্তান?
বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, দাউদ কিডনির কঠিন অসুখে আক্রান্ত। তার দায় নাকি এবার ঝেড়ে ফেলতে চায় আইএসআই। অনেকের প্রশ্ন, এটা কি তারই প্রথম ধাপ?
আবার অন্য পক্ষের বক্তব্য, এর আগেও বহুবার মনে হয়েছে, যেন হাতের নাগালে এসে গেছে দাউদ। কিন্তু বরাবরই অধরা থেকেছে ডন।
একনজরে দাউদ
নাম: দাউদ ইব্রাহিম কাসকর
জন্ম: ভারতে, ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৫।
বাবা: শেখ ইব্রাহিম আলি কাসকর মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন হেড কনস্টেবল।
আদি বাড়ি
• ডোংরি, মুম্বই
বর্তমান ঠিকানা
• হোয়াইট হাউস। আরব সাগর ঘেষা করাচির অভিজাত মহল্লা ক্লিফটনে। সৌদি মসজিদের কাছে। ১৯৯৪ থেকেই পাকিস্তানে।
অন্যান্য বাড়ি
• করাচির ডিফেন্স হাউসিং অথরিটির ৩০ নম্বর রাস্তায় ৩৭ নম্বর বাড়ি।
• করাচিরই নুরবাদে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাসাদ।
সন্তান
• ৪ জন। মেয়ে মাহরুখ পাক ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদের পুত্রবধূ।
অভিযোগ
• ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। রাষ্ট্রপুঞ্জের অপরাধীর তালিকায় নাম। সেখানের পরিচিতি ‘কিউডিআই-১৩৫’। মুম্বইয়ের ‘ডি-কোম্পানির’ পাণ্ডা। সুপারি নিয়ে খুন, তোলাবাজি, মাদক পাচারের বহু মামলা।
• মাথার দাম আড়াই কোটি ডলার।
• ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণের মূল চক্রী। হত আড়াইশোরও বেশি।
প্রধান শাগরেদরা
• ছোটা রাজন (এখন জেলে), ছোটা শাকিল (অধরা), টাইগার মেমন (মুম্বই বিস্ফোরণের পলাতক চক্রী), আবু সালেম (জেলে)
• সাবির, আনিস, হাসিনা পার্কারের মতো ভাইবোনেরাও জড়িয়েছে অন্ধকার জগতে
পাসপোর্টের তথ্য
• ভারতীয় হিসেবে মুম্বই থেকে আট বার। সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে এক বার।
• সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও দুবাই থেকে এক বার।
• পাকিস্তানি হিসেবে রাওয়ালপিন্ডি থেকে তিন বার, করাচি থেকে এক বার (জুলাই, ১৯৯৬)।
জয়নিউজ