কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার মাদ্রাসার দুই ছাত্র আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। রোববার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জবানবন্দিতে এই দুই ছাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের কথা স্বীকার করেছে। কুষ্টিয়া জর্জ কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
অনুপ কুমার নন্দী গণমাধ্যমকে জানান, গ্রেফতার দুই মাদ্রাসাছাত্র আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশ হেফাজত থেকে রোববার দুপুরে আদালতে তোলা হয় দুই মাদ্রাসাছাত্র আবু বক্কার ও সবুজ ইসলাম নাহিদকে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক নিশি কান্ত সরকার তাদের আদালতে নেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দেলোয়ার হোসেন দুই ছাত্র আবু বক্কার ও নাহিদের জবানবন্দি নেন। জবানবন্দি শেষে বিকেল ৫টার দিকে পুলিশের কড়া পাহারায় প্রিজন ভ্যানে করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জবাববন্দিতে আবু বক্কার ও নাহিদ জানায়, সম্প্রতি দেশে মূর্তি ও ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে নানা বয়ান হচ্ছে। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বয়ান তাদের বেশি ভালো লাগে।
গত বৃহস্পতিবার তারা শহরের কেনাকাটা করতে এসে দেখে পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বানানো হচ্ছে। পরদিন জুমার নামাজে একটি মসজিদে বয়ানে তারা শুনতে পায় ভাস্কর্য ও মূর্তি ইসলামে হারাম। এরপর তারা দু’জনে সিদ্ধান্ত নেয় পাঁচ রাস্তার মোড়ে ভাস্কর্য ভেঙে ফেলবে। ওই দিন রাত ১২টার দিকে দুই রাকাত নামাজ শেষে মাদ্রাসা মিস্ত্রিদের রেখে যাওয়া দুটি হাতুড়ি নিয়ে রওনা হয়।
রাস্তায় পুলিশের গাড়ি দেখে তারা মূল সড়ক দিয়ে না এসে ভেতরের সড়ক হয়ে মজমপুর গেটে এসে রেল লাইন ধরে হেটে থানামোড় হয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে আসে। সেখানে মই বেয়ে উপরে উঠে ৭ থেকে ৮ মিনিটের বেশি সময় ধরে ভাস্কর্যের কিছু অংশ ভেঙে চলে যায়। মাদ্রাসায় ফেরার পর আবদুল্লাহ নামের এক ছাত্র দেখে ফেলে। তার মাধ্যমে সকলে জেনে যায়। পরে শিক্ষকদের পরামর্শে তারা বাড়ি চলে যায়।
এর আগের দিন শনিবার অপর দুই আসামি মাদ্রাসাশিক্ষক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় গত ৫ ডিসেম্বর দুই শিক্ষক ও দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরের দিন শনিবার রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দীন এ ঘটনায় বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।