করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে তিনটি বিষয় বিধিনিষেধের আওতায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
শনিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ পরামর্শের কথা জানান কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা।
তিনি বলেন, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যেগুলো এখনও বিধিনিষেধের আওতায় থাকা উচিত। তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে— পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে না দেওয়া। দ্বিতীয়ত— সব সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দিতে হবে। হোক সেটা রাজনৈতিক, দলীয় বা ধর্মীয়। তৃতীয়ত— রেস্টুরেন্টগুলো খোলা থাকলেও যেন সেখানে বসে খাওয়া-দাওয়া বা আড্ডা না হয়। সেখানে শুধু খাবার বিক্রি হবে। এই তিনটি বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপের জন্য আমরা সরকারকে বিশেষভাবে বলেছি।
মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, আমাদের আরও কয়েকদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সে অনুযায়ী আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর নয়তো বড় কোনো বিপদের মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা তো লকডাউনের ফল পেয়েছি। দেশে সংক্রমণ হার যেখানে ছিল ৩২ শতাংশের বেশি, তা ১২ শতাংশ কমে এখন ২০ শতাংশের মধ্যে চলে এসেছে। আমরা মনে করি, এটি অবশ্যই লকডাউনের কারণে কমেছে। তার মানে লকডাউন কার্যকর হয়েছে। সুতরাং এ মুহূর্তে বিধিনিষেধগুলো তুলে নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের আরেকটু ভেবে নেওয়া উচিত।
কারিগরি কমিটির পরামর্শ সরকার কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে, বা করেনি— জানতে চাইলে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, সরকার যে আমাদের কোনো পরামর্শ নেয়নি, তা কিন্তু নয়। অনেক পরামর্শই নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করেছে। এ পর্যন্ত আমাদের মিটিং হয়েছে ৪৪টি। যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলোই বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রথমে আমরা বলেছিলাম পরীক্ষা বাড়াতে হবে। এখন সেই পরীক্ষা দৈনিক ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। এরপর বলেছিলাম অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করতে। এখন সেটিও হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ অ্যান্টিজেন এখন গ্রাম পর্যায়ে চলে গেছে।
তিনি বলেন, সেরো-সার্ভিলেন্সের জন্য অ্যান্টিবডি টেস্টের বিষয়ে বলেছিলাম। সেটি করা হচ্ছে। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা এবং অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে বলেছিলাম, সেটাও হয়েছে। সরকারকে লকডাউনের কথা বলার পর লকডাউনও দিয়েছে। তারপরও জীবন এবং জীবিকার কথা বিবেচনায় রেখে বিশেষ করে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক যে পরামর্শগুলো দিয়েছি, সেগুলো হয়তো সরকার শতভাগ নিতে পারেনি। তবে কয়েকটি নিয়েছে, আবার কয়েকটি সীমিত করে ফেলেছে।
টিকাদান কর্মসূচি প্রসঙ্গে মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমাদের যতগুলো পথ আছে, তার মধ্যে পুরনো হলো, স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টিকাদান। আমরা শুরুতে টিকাদান কর্মসূচি সুন্দর করে শুরু করলাম। তারপর আবার মাঝখানে একটু ঝামেলা হয়েছিল। কারণ টিকা পাওয়া যাচ্ছিল না। এখন আবার টিকা আসতে শুরু করেছে।
কারিগরি কমিটির সভাপতি বলেন, গণহারে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে কিছুটা তো এদিক-সেদিক হতেই পারে। এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে গণহারে টিকাদানের ব্যবস্থাপনা আরেকটু সুন্দর করতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি— গণটিকাদানের সময়ে কেন্দ্রভিত্তিক অনেকে টিকার জন্য গিয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ টিকা পেয়েছেন আবার কেউ পাননি। আমি মনে করি যে, স্বাস্থ্য অধিদফতরে যারা টিকা নিয়ে কাজ করছেন, তারা ব্যবস্থাপনায় নজর দেবেন। টিকা কর্মসূচিতে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছেন গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েরা। তাদের জন্য আলাদা আয়োজন এবং তাদের জন্য আলাদা কয়েকটি কেন্দ্র নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য আমরা বলেছি।