থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন ঘিরে পটকা বা আতশবাজি ফোটানোয় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু তা অমান্য করেই পুরোনো বছর বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে দেখা গেছে। ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা বাজতেই রাজধানী ঢাকার প্রতিটি এলাকায় ফানুস ওড়ানো শুরু হয়। একযোগে ফোটানো হয় পটকা বা আতশবাজি। আর তাতে বিকটশব্দে কেঁপে ওঠে গোটা মহানগরী। ফানুসের আগুন ছিটকে পড়ে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে।
উদযাপন শুরুর কিছু সময়ের মধ্যে ঘটে যায় অনেকগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। একসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর হটলাইন নম্বরগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে সারাদেশ থেকে প্রায় ২০০টি অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে ফায়ার সার্ভিস ও ৯৯৯ এর কন্ট্রোল রুমে।
ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে, এসব অগ্নিকাণ্ডের বেশিরভাগই ঘটেছে ফানুসের কারণে। তবে কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড আতশবাজির কারণে হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও ৯৯৯ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর ১০ জায়গা থেকে তারা আগুন লাগার খবর পান। যার মধ্যে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে লাগা তিনতলা একটি ভবনের আগুন ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।
এছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে আরও ১৯০টি আগুন লাগার ঘটনার ফোন আসে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে লাগা প্রতিটি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের অনেকগুলো ইউনিট রওয়ানা হয়। রাত ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২০টি ইউনিট এসব আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে কেউ হতাহত না হলেও পুড়ে ছাই হয়েছে অনেক কিছু।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফায়ার সার্ভিস ও জাতীয় জরুরি সেবার কন্ট্রোল রুমে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা জানান, একযোগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আগুন লাগার এত খবর এর আগে কখনো পাননি তারা। রাত ১২টা ১০ মিনিটের পর আগুন লাগার ফোন রিসিভ করতে করতে তারা হিমশিম খেয়ে যান। পরে তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় প্রতিটি ঘটনায় একাধিক ইউনিট পাঠিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, শৈত্যপ্রবাহ কিংবা বাতাস নয়। ঢাকা শহরের মতো ঘনবসতি এলাকায় ফানুস ওড়ানোর কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করতে পারে। গতকালের ওড়ানো ফানুসগুলো যদি রাজধানীর কোনো বস্তি এলাকায় পড়তো, তাহলে আরও ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার সাক্ষী হতো দেশ। তাই নববর্ষ উদযাপনে ফানুস ওড়ানো বন্ধ চায় ফায়ার সার্ভিস।
ডিএমপির লালবাগ এলাকাভুক্ত চকবাজার ও শাঁখারিবাজার মার্কেটে আতশবাজি ও ফানুসের বড় মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেট সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দিন মোল্লা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা জেলার উপ-পরিচালক (ঢাকা) দিলমনি শর্মা বলেন, জনগণের স্বার্থে ফানুস ওড়ানো বন্ধ করা উচিত। এবারের অবস্থা দেখে আমাদের মনে হয়েছে, নববর্ষের উদযাপন অনুষ্ঠানে ফানুস ওড়ানো বন্ধ করা দরকার। গতকাল রাতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় দাউ দাউ করে আগুন ধরেছে। তবে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
অগ্নি ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ফানুসের কারণে এক্সিডেন্টাল আগুন ধরে কলকারখানা, জনবসতি ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ফানুস ওড়ানো বন্ধ করা উচিত। তবে অনুমতি সাপেক্ষে এটি ওড়ানো যেতে পারে। কিন্তু তা কোনো জনবসতি, শহর কিংবা কলকারখানা এলাকায় নয়। সমুদ্রের তীরে এটি ওড়ানো যেতে পারে।
তিনি বলেন, পুলিশের মাধ্যমে এটি নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে, যাতে ফানুস উড়িয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ অগ্নিকাণ্ড না ঘটাতে পারেন।
এদিকে গতকাল শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর চত্বরে পটকা বা আতশবাজি ফোটানো বন্ধ করতে না পারার বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন খোদ ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আতশবাজি থামানোর বিষয় নয়। হাত দিয়ে আটকে রাখা যায় না। আতশবাজি না ফোটাতে গতকালও (বৃহস্পতিবার) আমি নগরবাসীকে অনুরোধ করেছি। মূলত এসব আতশবাজি ফোটায় একেবারে টিনেজ ছেলেমেয়েরা। বাড়িতে গিয়ে দেখেন, আপনার ছোট ভাই কিংবা বোন অথবা সন্তান হয়তো দুটো আতশবাজি কিনে ফোটাচ্ছে। এত বেশি বিধিনিষেধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করাটাও ডিফিকাল্ট। আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে তো নিষেধ করতে পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘নগরবাসীকে অনুরোধ করেছিলাম, অন্তত বয়স্ক মানুষ ও অসুস্থ মানুষের কথা বিবেচনা করে হলেও যেন এটি সীমিত রাখা হয়। আমি আশা করবো, যারা এই আতশবাজি ফোটাচ্ছে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’