দেশের আমদানি-রফতানির ৯০ শতাংশের বেশি বাণিজ্যের লাইফলাইনখ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। স্বভাবতই বন্দরে ব্যয়ের একটি প্রভাব পণ্য আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে পড়ে। বন্দরের ব্যয় কম হলে ব্যবসায়ের ব্যয় কমে আসে, উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বাড়ে।
আর তাই বাংলাদেশের গেটওয়ে খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান উন্নতির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। নানান উদ্দ্যেগে বর্তমানে এ বন্দরে এখন চিরাচরিত সেই শ্রমিক ধর্মঘটের চিত্র নেই বললেই চলে।
আগের চেয়েও অগ্রগতি হয়েছে পণ্য হ্যান্ডলিং (কনটেইনারজাত এবং খোলা জাহাজে আনা) এবং জাহাজ আগমনের দিক থেকে। বলা যায় গেল কয়েক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে।
নানামুখী উদ্যোগের ফলে বিশ্বের ১০০টি ব্যস্ত বন্দরের তালিকায় ৬৪তম স্থানে উঠে এসেছে। এর আগে এ অবস্থান ছিলো ৬৭তম।
নতুন নতুন যন্ত্রপাতির সংযোজন, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বন্দরসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের আন্তরিকতায় এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বিদেশি জাহাজের গড় অবস্থান সময় কমে এসেছে। বন্দরের খরচ কমে আয় বেড়েছে।
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কনটেইনার শনাক্ত করাসহ কনটেইনার আনলোডের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সন্নিবেশ করায় বন্দরের সক্ষমতা আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে।
সিসিটি ও এনসিটি বেসরকারি পরিচালনায় দেওয়ার পর থেকে জাহাজের গড় অবস্থান তিন দিনে নামে। এতে জাহাজ মালিকপক্ষের খরচ কমে যাওয়ায় বন্দরে জাহাজ আসার সংখ্যাও বেড়েছে। বন্দরের খরচও কমেছে বলে মত প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), পানগাঁ কনটেইনার টার্মিনাল এবং জেনারেল কার্গো বার্থে (জিসিবি) কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. শাহজাহানও গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করায় এবং বেসরকারি খাতকে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কাজে নিযুক্ত করায় চট্টগ্রাম বন্দরে এখন ঝামেলা নেই। তিনি বলেন, দ্রুত কনটেইনার ডেলিভারি নেওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক ইয়ার্ড এখন খালি থাকছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, সিসিটি, এনসিটি, পানগাঁ কনটেইনার টার্মিনাল এবং জিসিবি মিলে গত বছর মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৬০ শতাংশই করেছে বেসরকারি খাতের সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। বাকি ছয়টি প্রতিষ্ঠান করেছে ৪০ শতাংশ।
২০২১ সালে ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৪ টিইইউজ (টুয়েন্টি ইক্যুয়েভেলেন্ট ইউনিট) হ্যান্ডলিংয়ের মধ্যে সাইফ পাওয়ারটেক একাই করেছে ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৬৪ টিইইউজ। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো করেছে ১১ লাখ ৪২ হাজার ১৯০ টিইইউজ।
সূত্রগুলো জানায়, বেসরকারি অপারেটর দিয়ে টার্মিনাল পরিচালনা করলেও উত্পাদনশীলতা বাড়ার পাশাপাশি বন্দরের সাশ্রয় হয়েছে কয়েক শ কোটি টাকা। উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি ও আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানোর পেছনে নৌমন্ত্রণালয়, বন্দরের কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারী এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের কঠোর পরিশ্রম রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরে ইয়ার্ডসহ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। নতুন নতুন অনেক হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম যুক্ত হয়েছে। বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বার্থ অপারেটর শ্রমিক, আমদানি-রপ্তানিকারক, শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষ বন্দরে পরিণত হয়েছে কর্তৃপক্ষের কিছু ইতিবাচক ও সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর আজ পাল্টে গেছে,অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন টার্মিনাল অপারেশনের সঙ্গে জড়িত বেসরকারি খাতের শীর্ষ উদ্যোক্তারাও।
বন্দর চেয়ারম্যান এ বিষয়ে বলেন, বন্দরের দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে সেখানে ইয়ার্ড বানানো হয়েছে। একসময় বন্দরে মোট ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউ কনটেইনার রাখা যেত। এখন সেটির সক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮টিইইউজ কনটেইনার রাখা যায়।
তিনি জানান, বর্তমানে বন্দরে ৩৪ হাজার ২২৬ টিইইউজ কনটেইনার রয়েছে। শ্রমিকরা এখন বেসরকারি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকায় কথায় কথায় ধর্মঘট নেই বলে উন্নতির পাশাপাশি শৃঙ্খলাও ফিরেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। সূত্র : ইত্তেফাক।
জেএন/প্রিন্স