বাঁশখালী, দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এক সংসদীয় এলাকা। একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে এ সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-১৬। পুকুরিয়া থেকে পুঁইছড়ী পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান সড়ক নিয়েই বাঁশখালী। এর পূর্বাংশে পাহাড়, পশ্চিমাংশে বঙ্গোপসাগর, মাঝখানে সমতল। প্রকৃতির তিন চরিত্রের ভূমি কাঠামোর অঙ্গসাজে সাজানো বাঁশখালীর মানুষদের মন এলাকাভিত্তিক তিন চরিত্রের ভাবধারায় সন্নিবেশিত। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালীতে বাজিমাত করবে কে? পড়ুন জয়নিউজের বাঁশখালী প্রতিনিধি উজ্জ্বল বিশ্বাস’র বিশেষ প্রতিবেদন।
আওয়ামী লীগে চার হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রচারণার পাশাপাশি একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন। বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামিতে হেভিওয়েট একক প্রার্থীরা যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে মাঠ জমিয়ে রেখেছেন সরবে এবং নীরবে। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে আকস্মিক পাল্টে যেতে পারে নির্বাচনি হালচাল।
বাঁক বদলাবে বাঁশখালী
বাঁশখালী উপকূল থেকে প্রতিবছর দেশে-বিদেশে অন্তত বারোশ’ কোটি টাকার সামুদ্রিক মাছ চালান দেওয়া হয়। তেমনি পাহাড়ি ও সমতল ভূমি থেকে দুই হাজার কোটি টাকার শাক-সবজি-ফলমূল দেশে-বিদেশে চালান দেওয়া হয়। এছাড়া বাঁশখালীর পুকুরিয়া চা বাগান থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। অধিকাংশ মানুষ কৃষক ও জেলে। এরপরও নানামুখি সহিংসতায় কিছুদিন পরপর দেশে আলোচনায় আসে বাঁশখালী।
বাঁশখালীর বেদনা
আলোচনায় ছিল ২০০৩ সালে বাঁশখালীর সাধনপুরে সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ-শিশুসহ ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা, ২০১৩ সালে নাশকতার ঘটনায় বাঁশখালী আদালত ভবন, বাঁশখালী থানা ভবন, বাঁশখালী উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্থাপনা পুড়ে দেওয়া, ২০১৪ সালে সাগরে ৩১ জেলেকে রশি দিয়ে বেঁধে হত্যা এবং ২০১৫ সালে সাধনপুরে জঙ্গি আস্তনা উদ্ধার। এছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। পরে মিথ্যা মামলা হিসেবে মামলার নিস্পত্তি ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইকমান্ড দলীয় মনোনয়নে দূরদর্শিতার প্রভাব না দেখালে তাৎক্ষণিক দলবদল, দলছুট ও স্বতন্ত্র কায়দায় নির্বাচনি পরিস্থিতি ঘুরে যেতে পারে। দলীয় মনোনয়ন নির্ধারিত না হলেও আসন্ন সংসদীয় আসনে নিশ্চিত মনোনয়নের আশায় নিজস্ব তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকার দান, গ্রামীণ উন্নয়ন, ভিক্ষুক পুনর্বাসন, রাস্তাঘাট স্থাপন, নলকূপ স্থাপন করে এলাকা সরগরম করে তুলেছেন আওয়ামী লীগের এক সম্ভাব্য প্রার্থী।
বিএনপির একক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। অবশ্য তাঁর সমর্থিত দক্ষিণ জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. কাশেম চৌধুরীও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির একক মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। জামায়াত ইসলামের বাঁশখালী শাখার আমির এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত বর্তমান বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মওলানা মু. জহিরুল ইসলামও দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রচারণা চালাচ্ছেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ দলের মনোনিত প্রার্থী এম মহিউল আলম চৌধুরীও। তিনি ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরিষদের সহপরিবেশ ও পর্যটন বিষয়ক সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে স্বাধীনতার প্রথম নির্বাচনে বাঁশখালী আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহ-ই-জাহান চৌধুরী। ১৯৭৯ এর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। পরে তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে আরো দু’দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর ১৯৯১ সালে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অ্যাডভোকেট সুলতান উল কবির চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের দু’দফা নির্বাচন ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বাঁশখালীর ইতিহাসে তিনি প্রথম প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) প্রার্থী অ আ ম হায়দার আলী চৌধুরী পেয়েছেন ৬ হাজার ৮৪৮ ভোট। বাতিল ভোট ১ হাজার ২৮৫। ওই সময় বাঁশখালীতে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫ ৮৮ ভোট। বর্তমান ভোটার ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৪৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬১ হাজার ১৮৩ জন এবং নারী ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৬৪ জন।
চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আ’লীগ
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। শিল্প গ্রুপ স্মার্ট জিন্সের পরিচালক ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপি, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটন, বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য মৃত অ্যাডভাকেট সুলতানুল কবির চৌধুরীর ছেলে চৌধুরী মো. গালিব। এছাড়া আরো আছেন আওয়ামী লীগ নেতা স্ট্যার্ন্ডাড ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক কামাল মোস্তফা চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহপ্রচার সম্পাদক ড. মো. জমির উদ্দিন সিকদার। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় জোরেশোরে মাঠে আছেন প্রথম চার মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বাঁশখালীর দক্ষিণাঞ্চল জামায়াত-বিএনপির ঘাঁটি। উত্তরাঞ্চল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। মুজিবুর রহমান সিআইপি’র বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলে হওয়ায় এবং পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা স্থাপন করে বহুমুখি উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে কোন্দলবিহীন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। রাজনৈতিক ও সমাজসেবার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে তিনি সমাদৃত। এছাড়া তাঁদের ১৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বাঁশখালীর অন্তত ২৫ হাজার মানুষের। নতুন করে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সীতাকু-ে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করছেন তিনি। সেখানেও আরো শ্রমিক নিয়োগ করা হবে।
ইতোমধ্যে মুজিবুর রহমান সিআইপি নিজস্ব তহবিল থেকে স্থানীয় সহস্র গরিব-দুখীকে দান করেছেন অর্থ, পোশাক, খাদ্য। দানের এ প্রক্রিয়া তিনি এখনও অব্যাহত রেখেছেন। আবার প্রধানমন্ত্রীর ভিক্ষুক পুনর্বাসনের আওতায় এ পর্যন্ত তিনি বাঁশখালীতে দুই দফায় ১০০ ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করেছেন। আরো ভিক্ষুকের তালিকা করা হচ্ছে। তাদেরকেও পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করা হবে। তৃণমূল পর্যায়ের ২৫ হাজার দরিদ্র পরিবারকে টিন ও আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। গ্রামে গ্রামে ২৮০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছেন। ৪৮টি দরিদ্র পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। নিজস্ব অর্থায়নে গ্রামীণ রাস্তাঘাট সংস্কার, অসংখ্য গরীব মেয়ের বিয়ে, দূরারোগে আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা সেবা, গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে বই-খাতা, অনগ্রসর শিক্ষার প্রসারে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কর্মশালাভিত্তিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন।
বাঁশখালীতে ১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিল হয়। এ কাউন্সিলে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে সভাপতি এবং খোরশেদ আলমকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এর কয়েক বছর পর আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমকে বাদ দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানুল কবির চৌধুরীর নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করা হয় আব্দুল গফুরকে । এর পর থেকে বিগত ২২ বছরে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। এর মধ্যে ওই কার্যকরী কমিটির অনেক সদস্য মারা গেছেন। আবার অনেকে বিদেশ চলে গেছেন। এখন যাঁরা আছেন তারা অনেকে শারীরিকভাবে অক্ষম। সে কারণে আওয়ামী লীগের পুরাতন কোন্দল এখন জিঁইয়ে আছে প্রকাশ্যে-গোপনে। বাঁশখালী আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে ৯৬-এর নির্বাচনে সুলতান উল কবির চৌধুরী প্রায় অর্ধলাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ২০০১ ও ২০০৮ সালেও একই কোন্দলে নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয়। ২০০৮ সালে কোন্দলের কারণে সুলতান-উল-কবির-চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯১ হাজার ৮৭০। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী জাফরুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯৯ হাজার ৮৯৬ ভোট। মাত্র ৮ হাজার ২৬ ভোটে পরাজয়ে বরণ করতে হয় সুলতানকে। এখনো বাঁশখালী আওয়ামী লীগের বহুমুখি কোন্দল প্রকাশ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে মাঠে। চারটি গ্রুপ নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান বাঁশখালীর সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, বাঁশখালীতে আমিই একমাত্র সংসদ সদস্য। স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রের দেওয়া অর্থ থেকে এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। বিগত সংসদ সদস্যরা কোনো উন্নয়ন না করায় বাঁশখালী ছিল চির অবহেলিত। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ, প্রধান সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট খুবই খারাপ ছিল। সবকিছুর সংস্কার করেছি। ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁশখালীর উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ চলছে, ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁশখালী প্রধান সড়কের কাজ চলছে, ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ ভবন, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে থানা পুলিশ ভবন এবং ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আদালত ভবন নির্মাণ করেছি। ৬ কোটি টাকার কৃষি সম্প্রসারণ ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনার কাজ চলছে। হাসপাতালে এম্বুলেন্স দিয়েছি, থানায় পুলিশ ভ্যান দিয়েছি, গ্রামের ২৮টি রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছি, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে নানাভাবে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করেছি। আরো ৫০০ কোটি টাকার মতো প্রস্তাবিত প্রকল্প রয়েছে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের আত্মসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছি। আমাকে ঘিরে সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশা তার প্রতিফলন ঘটাতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। আমি ও আমাদের পরিবার সবসময় আওয়ামী লীগের মূল¯্রােতে থেকেই সংগঠনের জন্য কাজ করেছি। কখনো এলাকায় গ্রুপিং-বিভাজনে যুক্ত ছিলাম না। নেত্রী আমার উপর আস্থা রাখলে বাঁশখালী আসনটি আওয়ামী লীগকে উপহার দিব ইনশাল্লাহ।’
মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটন বলেন, আমি মাঠে আছি। নেতা-কর্মীদের নিয়ে সবসময় নেত্রীর ভিশন-মিশন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। সেই লক্ষ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে ও ইউনিয়নে উঠোন বৈঠক ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করছি।
ড. মো. জমির উদ্দিন সিকদার বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী এলাকার মানুষের পাশে সার্বক্ষণিক আছি। বিভিন্ন গ্রামে ফ্রি ক্যাম্প করে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
কামাল মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আমাদের পরিবার সবসময় আওয়ামী লীগের পাশেই থাকে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন বাস্তবায়নের কথা জানান দেওয়া আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
বাছাইপর্বে কারা- বিএনপি
বিএনপির একক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে নির্বাচনে যাব। অন্যথায় নয়। দেশে প্রথমত নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হতে হবে। তাহলেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে।
নিজেকে বাঁশখালীর বহুমুখি উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা দাবি করে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছর বাঁশখালীবাসীর দোয়ায় আমি চারবার সংসদ সদস্য ছিলাম। আমি সংসদ সদস্য হওয়ার আগে বাঁশখালী খুবই অবহেলিত ছিল। শঙ্খ নদীতে তৈলারদ্বীপ সেতু নির্মাণ করে আমি চির আবহেলিত বাঁশখালীকে আধুনিক বাঁশখালীতে রূপান্তর করেছি। পর্যায়ক্রমে বাঁশখালী ইকোপার্ক স্থাপন, বাঁশখালী পৌরসভা প্রতিষ্ঠা, বাঁশখালী হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, টিএন্ডটি ভবন নির্মাণ, ১১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ, উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণ, ১১৩টি গ্রামের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, পশ্চিম বাঁশখালীর সঙ্গে পূর্ব বাঁশখালীর যোগাযোগ রক্ষা করতে সবকটি বিশাল সেতু নির্মাণ, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ভবন নির্মাণ করে অবহেলিত বাঁশখালীর বৈপ্লবিক পরিবর্তন করেছিলাম। এমনকি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বহু মন্দির, কেয়াংও-এর ভবন নির্মাণ করেছি। এখন যারা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখায় তারা আসলে আমার ভিত্তির উপরই সংস্কারমূলক উন্নয়ন করছেন। আমি উন্নয়নে বিশ^াস করি বলে, জনগণ শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. কাশেম চৌধুরী বলেন, আমি প্রচারণা চালাচ্ছি ঠিক আছে। তবে জাফর ভাই দলীয় একক প্রার্থী মনোনীত হলে আমি মেনে নেব। অন্যথায় মাঠে আছি। অন্য কেউ মাঠে আছে কিনা প্রশ্নে বলেন, সন্দেহ করছি।
বাঁশখালীর বাড়তি কদর- জাতীয় পার্টি
জাতীয় পার্টির একক মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দল আমাকে মনোনিত করবেন এটা আমার দৃঢ় বিশ^াস। আমি ১৯৭৯-এর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি থেকে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। এখনও মাঠে আছি। দলের স্বার্থে বিভিন্ন কর্মকান্ড করে জাতীয় পার্টি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। ইনশাল্লাহ মনোনয়ন পেলে জাতীয় পার্টিকে বাঁশখালী থেকে নির্বাচিত করতে পারব।
বাতিল হবে এলডিপি?
চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি অ্যাভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী এলডিপির পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি এলডিপি থেকে দলের একক মনোনিত প্রার্থী হিসেবে দাবি করেন।
নাগরিক ঐক্য পরিষদ
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামি বাঁশখালী শাখার আমির উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মওলানা মু. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সবসময় জনগণের কাছে আছি। মানবসেবা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। জনগণ বুঝতে পেরেছে বলে বিপুল ভোটে আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। দলীয় মনোনয়ন কিংবা সিদ্ধান্ত অনুসারে অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আমি নাগরিক ঐক্য পরিষদ থেকে নির্বাচন করব।