কার্পেটিং উঠে ক্ষত-বিক্ষত ছিল সাতকানিয়া-বাঁশখালী-গুনাগরী সড়ক। শুকনো মৌসুমে ধুলোবালি, আর বর্ষায় পানি জমার কারণে দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। এক ঘণ্টার রস্তা পার করতে সময় লাগত দুই ঘণ্টা। বিভিন্ন সময় সংস্কার করা হলেও তা স্থায়ী ছিল না। তবে আশার কথা, দীর্ঘদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে দুই উপজেলার মানুষ।
দোহাজারী সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার এ সড়কে ৬৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন কাজ পুরোদমে চলছে। যৌথভাবে এ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স, সালেহ বিল্ডার্স ও হাসান বিল্ডার্স। আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে কাজ সম্পন্নের কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টর জানান, ডলুব্রিজ থেকে সাতকানিয়া আলিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত আরসিসি ঢালাই, রাস্তার মাথা থেকে বিউবোর প্রকৌশলীর কার্যালয় পর্যন্ত বিটুমিন দিয়ে কার্পেটিং করা হবে। সবমিলিয়ে ১৭টি কালভার্ট এবং রাস্তার পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হবে।
জানা যায়, সড়কটির করুণ অবস্থার কারণে অনেকটাই থমকে ছিল সাতকানিয়া ও বাঁশখালী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। অবশেষে স্থানীয় সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা নেজামুদ্দীন নদভীর প্রচেষ্টায় দূর হচ্ছে দু’উপজেলার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ।
স্বাধীনতার আগে ও পরে সাতকানিয়া ও বাঁশখালীর জনগণের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিল সাতকানিয়া-বাঁশখালী-গুনাগরী সড়ক। চট্টগ্রাম থেকে আসা বাঁশখালীগামী বাস-মিনিবাস এ পথ ধরেই যেত। তৎকালীন সময়ে বাঁশখালীতে কোনো কলেজ না থাকায় সাতকানিয়া কলেজের শিক্ষার্থীদেরও নিত্যআনাগোনা ছিল এ পথেই।
বাঁশখালী উপকূলীয় উপজেলা হওয়ায় মাছ ও লবণসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। এর কাজ পুরোপুরি শেষ হলে দু’উপজেলার ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
সাতকানিয়া রাস্তার মাথা থেকে সাতকানিয়া উপজেলা ও পৌরসভা সদরে প্রবেশের অন্যতম পথ এ সড়ক। সাতকানিয়া উপজেলা কমপ্লেক্স, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাতকানিয়া থানা, উপজেলা ভূমি অফিস, সাতকানিয়া যুগ্ম জজ ও সহকারী জজ আদালতসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সাতকানিয়া সদরে হওয়ায় উপজেলার খাগরিয়া, পুরানগড়, ধর্মপুর, বাজালিয়া, কালিয়াইশ, কেঁওচিয়া, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা ও ছদাহা ইউনিয়নবাসীর নিত্য আনাগোনা এ পথেই। সাতকানিয়া উপজেলার চরতী, আমিলাইশ, এওচিয়া, কাঞ্চনা, মাদার্শা, সোনাকানিয়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের উপজেলা সদরের সঙ্গে আন্তঃ যোগাযোগের মাধ্যমও এটি। সড়কের কাজ শেষ হলে দূর হবে সাতকানিয়া উপজেলার ১৬ ইউনিয়নবাসীর দুর্ভোগ।
মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ডলু সেতু থেকে সাতকানিয়ার আলিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সাতকানিয়া রাস্তার মাথা থেকে সাতকানিয়া আলিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজ চলছে। অন্যদিকে সাতকানিয়া ডলুব্রিজ থেকে বাঁশখালী গুনাগরী পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট নির্মাণ, গাইড ওয়াল নির্মাণ ও সড়ক প্রশস্ত করার কাজ চলছে।
সড়ক বিভাগের প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, ১৭টি কালভার্টের মধ্যে ৪টি কালভার্টের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বেসিক লেয়ারের কাজও শেষ পর্যায়ে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।
এওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক বলেন, সাতকানিয়া-বাঁশখালী উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির উন্নয়নকাজ দীর্ঘদিন উপেক্ষিত ছিল। কাজ শেষ হলে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে এ সড়কপথে যাতায়াত করা সম্ভব হবে।