দফায় দফায় আলোচনার পর সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে কারাগারে আটক বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বিএনপি । এজন্য লন্ডনে অবস্থানরত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৌখিক সম্মতি মিলেছে বলে জানা গেছে।
তবে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সরকারকে চাপে রাখতে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তির একদফা দাবি দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে সরকারের সংলাপে কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিক ও দেশের বিশিষ্টজন সংঘাত এড়াতে গোপনে দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সবুজ সংকেত না পাওয়ায় আলোচনার ফলাফল দৃশ্যমান হচ্ছে না।
সূত্র জানিয়েছে, সরকার একটু নমনীয় হলে যে কোনো সময় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি। তবে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরও নিজেদের দাবিগুলো জিইয়ে রাখবে। এ ব্যাপারে বিএনপি আর একটু সময় চায়। হুট করে ঘোষণা দিলে দলের কেউ কেউ খুশি হলেও অনেকের মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে বলে মনে করেন দলটির সিনিয়র নেতারা। দলের তৃণমূলকে দেখানোর জন্য হলেও বিএনপি সংলাপ ও সাতদফা দাবি সবসময়ই করে আসবে।
দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত হওয়ার পর বিএনপির ইমেজ বেড়েছে। সরকারের কাছে গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ। নির্বাচন বয়কট করে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে চায় না দলটি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বুঝেশুনে প্রস্ততি নিতে বলেছেন।
জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য বিএনপি ইতোমধ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নির্বাচনে শক্ত প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে বিএনপি নিজেদের জোট ও ফ্রন্টের সঙ্গে দফায় দফায় বসছে। যেহেতু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে, তাই প্রার্থী বাছাইয়ে এখন বিএনপির হাতে সময় কম। বিষয়টি বুঝতে পেরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কাছে বিএনপি প্রার্থীর তালিকা চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের সব ধরনের ছাড় দেওয়ার কথাও বলেছে।
সূত্র জানিয়েছে, যে কোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সুসর্ম্পক রাখবে বিএনপি। কারণ বিএনপিকে আলোর মুখ দেখাতে ড. কামালের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এ কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কোনো প্রকার সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হোক এটা বিএনপি চাইছে না। প্রয়োজনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীকে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ দেওয়ার কথাও বিএনপি থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে।
শনিবার (১০ অক্টোবর) বিএনপি নির্বাচন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসবে। সেখানে প্রার্থী চূড়ান্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করবেন সিনিয়র নেতারা। এরপরই বিএনপি নির্বাচন বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত জানাবে। দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য হলেও নির্বাচনে বিএনপিকে আসতে হবে। তবে সরকার নমনীয় না হলে বিএনপি ঘোষণা দিতে পারছে না।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশ নেব না সেটা বলিনি। আমরা প্রস্তুত । তবে তফসিল পেছাতে হবে। খালেদার জিয়ার মুক্তি ও সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকার নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করলে বিএনপির অংশ না নেওয়ার কোনো কারণ নেই।
এদিকে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করা সরকার ও ইসির দায়িত্ব। কিন্তু তারা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সঠিক আচরণ করছে না। তফসিল ঘোষণা দুই-তিনদিন পরও করা যেত। ঐক্যফ্রন্ট যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা সংবিধানের বাইরে নয়। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাতদফার কোনোটিই সরকার মেনে নেয়নি।
দুদু আরো বলেন, নির্বাচন প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কথা হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, আমরা কথা চালিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক কি হয়। নির্বাচনে আসবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখনও হাঁ বা না বলছি না। দেখছি সব । এরপর সিদ্ধান্ত জানাব।