চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, উৎসবমুখর, অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা সম্পন্ন করা হবে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১৪ অক্টোবর শুভ মহালয়া ও ২০-২৪ অক্টোবর দুর্গাপূজার শ্রীশ্রী মহা ষষ্ঠি থেকে শ্রীশ্রী বিজয়া দশমী অনুষ্ঠিত হবে। সার্বজনীন দুর্গাপূজাকে ঘিরে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে কেউ যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। প্রত্যেক পূজা মন্ডপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত উপহার সামগ্রী যথাসময়ে পৌঁছে দেয়া হবে। সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় এই উৎসবে কোন বিশেষ গোষ্ঠী বা মহল কর্তৃক ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত করলে তা সহ্য করা হবে না। সকলের মাঝে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় থাকুক এটা আমাদের প্রত্যাশা।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আজ ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা এনএসআই’র যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, মহানগর এনএসআই’র যুগ্ম পরিচালক মোঃ আবু আব্দুল্লাহ, সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ জাহাংগীর, আনসার-ভিডিপি’র জেলা কমান্ড্যান্ট এএইচএম সাইফুল্লাহ হাবিব, র্যাব’র ডিএডি মোঃ খালিদুর রহমান, সিটি করপোরেশনের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী বিপ্লব দাশ, জেলা কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মোঃ কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন, উত্তর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নটু প্রসাদ ঘোষ, দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ রঞ্জন দাশগুপ্ত, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ ছাইফুল্লাহ মজুমদার, মহানগর, জেলা ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সরকারী-স্বায়স্তশাসিত-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/প্রতিনিধিগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর এলাকায় শারদীয় দুর্গাপূজা চলাকালীন পূজামন্ডপ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র্যাব, পুলিশ ও আনসার টহল সদস্যরা টহল দায়িত্ব পালন করবে। প্রত্যেক পূজামন্ডপ কর্তৃক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল (নারী-পুরুষ) নিয়োজিত রাখতে হবে। স্বেচ্ছাসেবদেও পরিচিতি কার্ড আবশ্যিকভাবে গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। পূজামন্ডপসমূহ ও আশপাশের এলাকায় নিজস্ব উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পর্যাপ্ত লাইট ও বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর প্রস্তুত রাখা, শৃঙ্খলা রক্ষায় মন্ডপে আগত পূর্ণ্যার্থী-দর্শনার্থী শিশুসহ নারী-পুরুষদের-পৃথকভাবে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার ব্যবস্থা, হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ রেকর্ড ও সংরক্ষণ করতে হবে। পূজামন্ডপে আগত মহিলা দর্শনার্থীরা যাতে ইভটিজিং বা কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার শিকার না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি পূজামন্ডপ এলাকায় মাদকদ্রব্য সেবন বা বিক্রয় সংক্রান্ত অপরাধ দমনের বিষয়ে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধসহ যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পূজামন্ডপের গেইটে, দৃশ্যমান বা উন্মুক্তস্থানে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তা, এস.আই, ডিউিটি অফিসার, র্যাব, ফায়ার সার্ভিসের টেলিফোন নম্বর ও জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বর সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে রাখতে হবে। প্রতিমা বিসর্জন এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সড়কে পর্যাপ্ত সড়ক বাতির ব্যবস্থা করণসহ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বিসর্জন কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
ডিসি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আরও বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে পূজামন্ডপে আতশবাজি পোড়ানো যাবে না, আলোকসজ্জ্বায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পূজামন্ডপ সমূহে সকল প্রকার আলোকসজ্জ্বা, সাজসজ্জ্বা, মেলার আয়োজন, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সীমিত করণসহ প্রয়োজ্য ক্ষেত্র ব্যতীত অপর সকল সময়ে মাইক ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান জানান, চট্টগ্রাম মহানগরসহ জেলায় এবার মোট পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২ হাজার ৪৫৮টি, তন্মধ্যে মহানগরে ২৯৩টি ও জেলার ১৫ উপজেলায় ২ হাজার ১৬৫টি।
জেএন/এমআর