একদিকে শীতের তীব্রতা, অন্যদিকে নির্বাচনী হাওয়া। তবে এর কোনটাই বাধা নয় সংঘবদ্ধ গরুচোরদের। কাক ডাকা ভোরে কিংবা মধ্যরাতের কনকনে শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করেই পেশাগত কাজ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে চোরের দল।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম জুড়ে আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ গরু চোর চক্র। প্রায় রাতে বিভিন্ন উপজেলার কোন না কোন গ্রাম থেকে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। পথে বসছে সাধারণ কৃষক।
আতংকে দিন কাটছে খামারিদের। কোথাও কোথাও গরু চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিরও শিকার হচ্ছে চোরের দল। তবুও তারা অপ্রতিরোধ্য। ধরাছোঁয়ার বাইরে চোর চক্র।
গেল এক মাসে চট্টগ্রামের মিরসরাই, আনোয়ারা, পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শতাধিক গরু চুরির খবর পাওয়া গেছে। অনেক জায়গায় রাত জেগে পাহারা দিয়েও গরু রক্ষা করতে পারছে না মালিকরা।
জানা গেছে, সংঘবদ্ধ গরু চোরেরা মধ্যরাত থেকে ভোরের আলো ফোটার আগের সময়টাকেই বেঁচে নেয়। এসময় মানুষ যখন গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকে,ঠিক সে সময়ে ছোট নম্বরবিহীন ট্রাক/পিকআপ,মাইক্রোবাস,হাইয়েছ, চাঁদের গাড়ি ও সিএনজিতে উঠিয়ে গরু নিয়ে যায় চোরের দল।
ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, এসব ঘটনায় থানা পুলিশ করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় থানায় অভিযোগও দেন না। ফলে খুব কম সংখ্যক মামলাই রেকর্ডভুক্ত হয়। আর তাতে চোরের দল একের পর এক অপরাধ সংঘঠিত করেও পার পেয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে।
চট্টগ্রামে সবশেষ চুরির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে আনোয়ারা উপজেলায়। শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের ইউনিয়নের পূর্ব ঝিওরি গ্রামের জব্বার আলী মাঝির বাড়ির মো. রফিক প্রকাশ মানুর (৫৫) গোয়ালঘর থেকে ৪ লাখ টাকা মূল্যের ৬টি গরু চুরি হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত মো. রফিক মানু জানান, প্রতিদিনের ন্যায় সন্ধ্যার পর বাড়ির পাশের গোয়ালঘরে আমার দুইটি গাভি, দুইটি বাচুর এবং দুটি ষাড়সহ মোট ৬টি গরু গোয়াল ঘরে বেঁধে বাহিরে তালা বন্ধ করে ঘুমাতে যায়।
কিন্তু পরদিন ভোরে গোয়ালঘরে এসে দেখি আমার ৬টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। আমার মনে হয় রাতে চোরের দল গাড়ি নিয়ে এসে গরুগুলো নিয়ে যায়। দুই বছর আগেও আমার দুই লাখ টাকা মূল্যের দুটি করে চুরি হয়ে গেছিলো। এখন আবারও গরু চুরি হয়ে যাওয়ায় আমি অসহায় হয়ে গেছি।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহম্মদ জানান, গরু চুরি বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বোয়ালখালীর আমুচিয়া ইউনিয়নে ৯ ডিসেম্বর ভোরে ৫ গরু চোরকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, ভোররাত ৩টার দিকে জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকায় এক গৃহস্থের গোয়াল ঘরের তালা কেটে ফেলে চোরের দল।
এসময় বাড়ির লোকজন বের হয়ে গোয়াল ঘরে তালা কাটা দেখতে পান এবং চোরের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ধাওয়া দিলে চোরেরদল দুইটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে পালিয়ে আমুচিয়া গুচ্ছ গ্রামের দিকে চলে যায়।
একপর্যায়ে খবর পেয়ে ওই এলাকায় পাহারায় থাকা লোকজন একটি সিএনজি অটোরিকশার গতিরোধ করতে সক্ষম হন। ওই অটোরিকশায় ৫ জন যুবক ছিল। তবে অপর সিএনজিটি পালিয়ে গেছে। তারা লাইট নিভিয়ে দিয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছিল।
এরআগে পটিয়ায় রাতের আধারে কৃষকের বাড়ি থেকে গরু চুরির অভিযোগে চারজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। ৮ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে উপজেলার জিরি ইউনিয়নের ৪ নং ওয়াডের পুস্তিপাড়া এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, জিরি ইউনিয়নের পুস্তিপাড়া এলাকার কৃষক মোজাহেরুল ইসলামের দুটি গরু রাতে গোয়াল ঘর থেকে চুরি হয়ে যায়। তিনি ভোর রাতে গরুগুলো খুঁজতে বের হন।
স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় গরুর মালিক তার গরু দুটি খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির সময় জিরি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সন্দেহজনকভাবে ৪ জনকে আটক করে। পরে চুরি হওয়া গরু দুটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়ায় তাদের গণপিটুনি দেন।
৫ ডিসেম্বর রাতে মিরসরাই উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের নয়দুয়ারিয়া এলাকার ক্লিপটন ডেইরী খামার থেকে ৩টিসহ ওই এলাকা থেকে ৬টি গরু নিয়ে যায় চোর চক্র। এসময় গরু চুরিতে বাঁধা দেয়ায় স্থানীয় একব্যক্তিকে চোরের দল বেদম ভাবে পিটিয়ে আহত করে। নয়দুয়ার থেকে নিয়ে যাওয়া গরু গুলোর দাম প্রায় ৫ লাখ টাকা।
গরু চোর চক্রটি ধরতে ইতিমধ্যে পুলিশের একটি টিম কাজ করছে জানালেন মিরসরাই থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দেবনাথ।
জেএন/রাজীব