চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অন্যতম গৌরব ও ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল। বর্তমানে পৃথিবীর একমাত্র শাটলের ক্যাম্পাস চবি। ক্যাম্পাস জীবনের প্রথম দিন থেকেই ধীরে ধীরে এই শাটলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা সৃষ্টি হয় প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে।
কিন্তু সেই শাটলেই আজ কাটা পড়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ব বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রবিউল আলমের স্বপ্ন।
চট্টগ্রামের বটতলি স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল শুরু হয় প্রতিদিন সকাল ৭.৩০ টা থেকে। তখন থেকেই ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য শত শত শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে থাকে ষোলশহর ষ্টেশনে।
প্রতিদিনের ন্যায় আজও ৮:২০ মিনিটের ট্রেন এসে হাজির হয় ষোলশহর স্টেশনে । শুরু হয় স্টেশনের সেই চিরচেনা দৃশ্য। শুরু হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠার চেষ্টা। উঠতে গিয়েই কাটা পড়ে রবিউল আলমের দুই পা।
চলতি মাসের ১২ তারিখ মাস্টার্সের পরীক্ষা। মাস্টার্স শেষ করেই বিসিএস দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। বিসিএস নিয়ে পড়ালেখাও করছিল হরদম। পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরার জন্য অন্য চাকরিও খুঁজছিল। কিন্তু শাটল তার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নিলার দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান রবিউল। ভাই বোনের মধ্যে পঞ্চম হলেও তার দিকেই তাকিয়ে ছিল বাবা-মা। প্রবাসী বড় ভাই এর স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার। আর বড়দের মধ্যে অন্য দুই ভাই নাফ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা উপার্জন করত। কিন্তু দুই বছর আগে তাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় অভাবের মধ্য দিয়েই চলছিল তাদের সংসার।
তার ছোট ভাইদের একজন চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর অন্যজন সদ্য দ্বাদশ পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিজে দুইটা টিউশনি করেই ছোট ভাইদের কোচিং ফি, পড়ালেখাসহ হাতখরচের ব্যাবস্থা করত সে।
রবিউলের ছোট ভাই ও চবি শিক্ষার্থী রফিক বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থা একেবারেই খারাপ। ভাইয়া দুইটা টিউশন করিয়ে আমার ও ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালাত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী জানান,বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি। তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। আর্থিকভাবে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিব।
রফিক বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, মেডিকেলের চিকিৎসক এবং ভাইয়ের বন্ধুদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট আন্তরিকতা পেয়েছি। আলী আজগর স্যার আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
আর মাত্র কিছুদিন পরেই শেষ হতো তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। কিন্তু ট্রেনে কাটা পড়েই তার সব শেষ হয়ে গেল। রবিউলের বন্ধু মোস্তফা কামাল আক্ষেপ করে বলেন, গতরাতেও সবাই আড্ডা দিলাম। ফোনেও কথা বলেছি। কিন্তু ভোরে উঠেই এ সংবাদ শুনে দিন শুরু করতে হবে এটা কার কপালে আছে! সংবাদটা শোনার পর দাঁড়িয়ে হাটতে পারছিলাম না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন,আর কত হাত পা হারালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চোখ খুলবে। প্রতিবছরই শাটল ট্রেনে যাতায়াত করতে গিয়ে আহত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বারবার বগি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।