ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে আরও এগিয়ে গেলেন বিরাট কোহলিরা। একইসঙ্গে আসর থেকে বিদায় ঘটল গেইল-হোল্ডারদের। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচ খেলে অপরাজিত ভারত পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয়স্থান দখল করল।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। যেখানে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬৮ রান করে ভারতীয় দলটি। জবাবে ৩৪.২ ওভারে ১৪৩ রানে গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা।
ভারতীয় পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে উইন্ডিজ। দলীয় ১০ রানে ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামির বলে ওপেনার ক্রিস গেইল বিদায় নেন।এরপর ৬ রান যোগ হতেই শাই হোপকেও তুলে নেন শামি।
৫৫ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন সুনীল অ্যামব্রিস ও নিকোলাস পুরান। কিন্তু ৩১ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে ফেরেন অ্যামব্রিস। ২৮ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন পুরানও।
এর পরের গল্পটা শুধু ভারতীয় বোলারদের। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ক্যারিবীয় কোনো ব্যাটসম্যানই নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ডানহাতি পেসার শামি সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট তুলে নেন। জসপ্রিত বুমরাহ ও যুজভেন্দ্র চাহাল দুটি করে উইকেট পান। আর হার্দিক পান্ডিয়া ও কুলদ্বীপ যাদব একটি করে উইকেট ভাগ করে নেন।
এর আগে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ভারতের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। দলীয় ২৯ রানেই ওপেনার রোহিত শর্মা বিদায় নেন। যদিও শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। পরে উইন্ডিজ রিভিও নিলে থার্ড আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত জানান। বিশ্বকাপে ক্যারিবীয় পেসার কেমার রোচের প্রথম উইকেট এটি। রোচের বলে উইকেটরক্ষক শাই হোপের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে রোহিতের ব্যাট থেকে এসেছে ১৮ রান।
রোহিতের বিদায়ের পর রাহুল ও কোহলির জুটিতে আসে ৬৯ রান। এরপর বিজয় শঙ্কর ও কেদার যাদবকেও হোপের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন রোচ। যদিও যাদবকে শুরুতে আউট দেননি অল-ফিল্ড আম্পায়ার। পরে রিভিও নেয় উইন্ডিজ আর তাতেই বিদায় নিতে হয় যাদবকে। এর মাঝে ৫৫ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ফিফটি করেন কোহলি। এটি কোহলির চলতি বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ ও সবমিলিয়ে ৫৩তম ওয়ানডে ফিফটি।
ধোনি ও কোহলি মিলে ইনিংসের ঘাটতি মেরামত করার চেষ্টা করেন। দুজনের জুটিতে আসে ৪০ রান। তবে ধোনি ছিলেন অতি সাবধানী। এদিকে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যেতে থাকা কোহলি হোল্ডারের নিরীহদর্শন বাউন্সারে ক্যাচ তুলে দিলে ফের বিপাকে পড়ে যায় ভারত। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৮২ বলে ৮ বাউন্ডারিতে সাজানো ৭২ রানের ইনিংস।
কোহলির বিদায়ের পর হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে ৭০ রানের জুটি গড়েন ধোনি। পান্ডিয়া ৩৮ বলে ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে শেলডন কোটরেলের বলে তুলে মারতে গিয়ে ফ্যাবিয়েন অ্যালেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। পান্ডিয়ার বিদায়ের পর ধোনির ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছুটে। শেষ ১৬ রান তুলতে তিনি খরচ করেন মাত্র ৬ বল। শেষ পর্যন্ত ৬১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫৬ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ধোনি। এটি ধোনির ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭২তম ফিফটি।
বল হাতে ১০ ওভারে ৩৬ রান খরচে ৩ উইকেট পেয়েছেন কেমার রোচ। ২টি করে উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন কোটরেল ও হোল্ডার।
এই ম্যাচে ব্যক্তিগত ৩৭ রানের মাথায় একটি বিশ্বরেকর্ড গড়েন কোহলি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে ২০ হাজার রানের মাইলফলক গড়েছেন তিনি। এই মাইলফলক ছুঁতে কোহলি খেলেছেন ৪১৭টি ইনিংস। করেছেন ৬৬টি সেঞ্চুরি।
কোহলির আগে ২০ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন ১১ জন ব্যাটসম্যান। ভারতীয়দের মধ্যে এই রেকর্ড গড়েছেন কেবল দু’জন। শচীন টেন্ডুলকার (৩৪,৩৫৭ রান) এবং রাহুল দ্রাবিড় (২৪,২০৮ রান)।
কোহলির আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম সময়ে ২০ হাজার রানের মাইলফলক গড়েন শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারা। এই দুই ক্রিকেট কিংবদন্তির লেগেছে সমান ৪৫৩ ইনিংস। তিন নম্বরে ছিলেন রিকি পন্টিং। সাবেক অজি অধিনায়ক ৪৬৮ ইনিংসে এই রান করেন।