বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়েছেন মংস্য আহরণ ও বিপণন পেশায় নিয়োজিত লক্ষাধিক মানুষ। আয়ের পথ বন্ধ থাকায় দিশেহারা জেলে পরিবারগুলো। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে লইট্যা, রুপচাঁদা, কোরাল, ইলিশ, পোপা মাছসহ হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছের।
এর ফলে বাজার ছেয়ে গেছে খামারে উৎপাদিত তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, রুই, কাতলা, বাটা, ট্যাংরা, চিংড়ি মাছে। অন্যদিকে বাজারে পুকুরের মাছের দামও অনেকটা আকাশ ছোঁয়া।
নগরের ফিরিঙ্গী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলে ও মাঝিরা। এসময় জসিম মাঝি নামে এক জেলের সঙ্গে কথা হয় জয়নিউজের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমাদের তো একটাই উপার্জনের উৎস। যদি সেটাও বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমরা খাবো কি? অনেক সময় দেখা যায় আমরা একবেলা খেতে পারি আর একবেলা খেতে পারি না।
তিনি আরো বলেন, আমার পরিবারে মা-বাবা, স্ত্রী এবং ১টা মেয়ে আছে। এমনিতে খুব কম উপার্জন করি, তার উপর এখন মাছ ধরা বন্ধ। তাই এখন চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে কাজীর দেউড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। মাছ ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, এখন বাজারে সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ কম। কারণ ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ। এ কারণে জেলেরা মাছ ধরতে যেতে পারছে না। তাই মাছের দামটা একটু বেশিই।
সুকুমার নামে আর এক জেলে বলেন, মা ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুমে ২১ দিন সবধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধের নির্দেশ মেনে নিয়েছি। ঝাটকা ইলিশ সংরক্ষণে ছয় মাস ধরে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করা হয়েছে- তাও মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখন ইলিশের ভরা মৌসুমে ৬৫দিনের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মেসার্স চাঁদপুর ফিশ ট্রেডার্সের মালিক বিপ্লব সরকার জয়নিউজকে বলেন, এখানে ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো ক্ষতি নেই। তবে এতে সরাসরি জেলেদের অনেক ক্ষতি হয়। কারণ তারা দিনে এনে, দিনে খায়। দুইমাস তাদের জন্য দীর্ঘসময়।
তিনি আরো বলেন, জেলেদের জন্য এ দুইমাস সরকার থেকে যথাযথ সাহায্য করা উচিত।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে বন্ধ আছে সামুদ্রিক মাছ ধরা। বাণিজ্যিক ট্রলারের পাশাপাশি সবধরনের নৌযানের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য। সরকারের পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘মাছ আহরণের ছুটি’ হিসেবে ভাবতে মৎসজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান হয়েছে।