সারাদেশে ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে শিক্ষা বিভাগ আছে শুধু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে শিক্ষা বিভাগে নীরব বিপ্লব ঘটাচ্ছে চসিক। একদিকে যেমন বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, সেইসঙ্গে বেড়েছে শিক্ষার মান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যোগ হয়েছে কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। এর চেয়েও বিস্ময়কর ব্যাপার, আধুনিক এসব সুবিধার পরও কমেছে ভর্তুকি!
আগে প্রতিবছর শিক্ষা খাতে ৪৩ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতো চসিক। তবে আ জ ম নাছির উদ্দীন নগরপিতার দায়িত্ব নেওয়া পর এ ভর্তুকি কমিয়ে এনেছেন ৩৬ কোটি টাকায়। তাঁর দক্ষ ও সঠিক নেতৃত্বে শিক্ষাব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে জানান চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া।
তিনি জয়নিউজকে বলেন, চসিকের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় এ বিভাগেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি উন্নতির ছাপ। শুরুতে শিক্ষায় ভালো ফলাফল না এলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চসিক পরিচালিত স্কুল-কলেজে বেড়েছে পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা।
চসিকের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হয় শিক্ষায়। তবে বাজেটে আরও বেশি বরাদ্দ পেলে আরো বেশি উন্নতি সম্ভব বলে মনে করেন চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান মেয়র শিক্ষাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে পড়ালেখায় আরো ভালো করতে পারে এজন্য মেয়র বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
শিক্ষা বিভাগ নিয়ে মেয়রের পরিকল্পনা:
চসিক পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্যসেবা চালু ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তানদের ১৫ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করে হয়েছে। এর হার আরো বাড়িয়ে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী করার পরিকল্পনা রয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা ও একাডেমিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরো অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামত এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আলোকায়ন, আধুনিক মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
৪ বছরে উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য:
চট্টগ্রাম নগরকে একটি আধুনিক-শিক্ষাবান্ধব নগর গড়তে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য রক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করেন। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে ১নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ফতেয়াবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণী চালু করে স্কুলটিকে কলেজে উন্নীত করেন। ২০১৬ সালে পাথরঘাটা মহিলা কলেজ ও নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজকে চসিকের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর কিছুদিন পর ফতেয়াবাদ ডিগ্রি কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ এবং হাতে খড়ি স্কুল ও কলেজকে চসিকের অন্তর্ভুক্ত করেন।
সিটি মেয়রের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে ১১টি স্কুল ও কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং নিম্ম মাধ্যমিক পর্যায়ে মন্ত্রণালয় থেকে একাডেমিক স্বীকৃতির অনুমতি পেয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানসমূহ এমপিভুক্তির জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া চারটি কলেজের কলেজ স্বীকৃতির কার্যক্রম, ৪টি কলেজের স্কুল শাখা থেকে কলেজ শাখা পৃথকীকরণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। একটি স্কুল ও একটি কলেজে সহশিক্ষা চালুকরণ প্রক্রিয়াও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চারটি প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি এবং ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী শাখা খোলার অনুমতির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন:
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দায়িত্ব নেওয়ার পর চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের নজর দেন। নগরপিতার মতে, শিক্ষার অবকাঠামো বৃদ্ধি না হলে শিক্ষার উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে নতুন ও উর্ধ্বমুখী ভবন সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজ চলেছে ২০টিতে। আবার জাইকার অর্থায়নে নতুন ভবন নিমাণ কাজ চলছে ১০টিতে। এছাড়া চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে ১০টির নতুন ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। চসিকের অর্থায়নে উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও সংস্কার কার্যক্রম চলছে তিনটিতে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনুদানে মেরামত কার্যক্রম চলছে আটটিতে। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে আরো তিনটি ছয়তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। চারটি প্রতিষ্ঠানে সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের সহায়তায় চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে আধুনিকায়ন করা হয়েছে থিয়েটার ইনস্টিটিউট।
শিক্ষায় ডিজিটালাইজেশন:
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সিটি মেয়র চসিকের শিক্ষা বিভাগের সব কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় বেতন ও অন্যান্য ফি ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চসিক পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কলেজে ২০ হাজার ৩৩০ জন, মাধ্যমিকে ৩৭ হাজার ৭০০ জন, প্রাথমিক ও কেজিতে ৪ হাজার ৯৫০ জন পড়ালেখা করছে। তাদের পাঠদান করছেন ১ হাজার ৮৭ জন স্থায়ী এবং ৬৪১ জন অস্থায়ী শিক্ষক।
যোগাযোগ করা হলে নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর চসিকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৯০টিতে উন্নীত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান না থাকলে নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ পাওয়া নিয়ে সন্দেহ সংশয় থেকে যেত। আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় শিক্ষা খাতে চসিককে ৪৩ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হতো। নানা পরিকল্পনার কারণে এটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন ভর্তুকি দিতে হয় ৩৬ কোটি টাকা।
তিনি আরো বলেন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ায় উদ্বুদ্ধ করা হয়। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলবো, চসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়াশোনার মান আগের চেয়ে ভালো। সামনের দিনগুলোতে মান আরও বাড়বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভারপ্রাপ্তমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছি। যদিও অনেকে না বুঝে উদ্দেশ্যমূলক সমালোচনা করে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে চসিকের ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৩টি কলেজ, ১টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১টি কম্পিউটার ইনস্টিটিউট, ৫টি কম্পিউটার ক্যাম্পাস, ৭টি কিন্ডার গার্টেন এবং ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া ৩৫০টি ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, ৯টি মসজিদ, ৪টি সংস্কৃত টোল, ১টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ১টি গণশিক্ষা কেন্দ্র, ১টি থিয়েটার ইনস্টিটিউট ও ১টি পাবলিক লাইব্রেরি পরিচালনা করে আসছে। এরমধ্যে দুটি কলেজে অর্নাস কোর্স চলমান রয়েছে। আরো দুটি কলেজ চালুর প্রক্রিয়া চলছে।