অর্ধমৃত নারীটির গা থেকে খসে পড়েছে পরনের শাড়ি। উস্কোখুস্কো চেহারার এক মধ্যবয়সী পুরুষ দেহের সব শক্তি দিয়ে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছেন ওই নারীকে। সম্প্রতি ভারতীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল এই ছবিটি।
ছবির নিচে ক্যাপশন দিয়ে বলা হচ্ছে, ১৯৭১ সালে ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের’ (ভারতীয়রা পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে এ নামেই ডাকে) সময় তোলা ছবিতে একাধিবার ধর্ষণের শিকার স্ত্রীকে বয়ে চলছেন স্বামী। এরপরই দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে হিন্দুদের নির্যাতিত হওয়ার চিত্র এটি।
ভারতীয় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রতীক সিনহা প্রতিষ্ঠিত অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট এএলটিনিউজ খোঁজখবর নিয়ে দেখেছে, ছবিটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তুলেছিলেন ব্রিটিশ চিত্রগ্রাহক মার্ক এডওয়ার্ডস। তার প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থা হার্ডরেইন প্রজেক্টের ওয়েবসাইটে ছবিটির বিবরণ দেওয়া রয়েছে।
এডওয়ার্ডস ছবির শিরোনাম দিয়েছিলেন- কলেরার শিকার। বিবরণে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে শরণার্থীরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আসছে।
২০১৪ সালে রেয়ার হিস্টোরিকাল ফটোজ (আরএইচপি) ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছবিটির ব্যাপারে এডওয়ার্ডস বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের যুদ্ধ চলাকালে কলেরা আক্রান্ত স্ত্রীকে তার স্বামীর বয়ে নিয়ে যাওয়ার এই কষ্টকর ছবিটি আমি তুলেছিলাম।’
ছবির নারীটি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কিনা জানতে এএলটিনিউজের পক্ষ থেকে এডওয়ার্ডসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ইমেইল বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘সে কলেরায় মারা গিয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। তবে ধর্ষণের শিকার হওয়ার কোনো আলামত বা লক্ষণ তার মধ্যে ছিল না।’
তাহলে কেন ভুল তথ্য দিয়ে ছড়ানো হচ্ছে এই ছবি?
এএলটিনিউজ জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন বিজেপির পাস করা বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের পক্ষে সাফাই গাইতে সমর্থকরা জেনেবুঝে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে ছবিটি ছড়াচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চাইছেন বাংলাদেশ, ভারত ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া যৌক্তিক।