করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামে। মোট চিকিৎসকের ৮৩ জন করোনায় আক্রান্ত ও ৩ জনের মৃত্যু; সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে। আর সমন্বয়হীতার কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না পাওয়ায় সরকারের অধিগ্রহণ করা বেশ কিছু হাসপাতালেও চিকিৎসা সেবা চালু করা যাচ্ছে না।
বৃহত্তর চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কর্মরত চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ৩শ’। এর মধ্যে করোনা চিকিৎসাসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত ৮৩ জন চিকিৎসক গত দু’সপ্তাহে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্ত একজনসহ উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৩ জন চিকিৎসক।
এদিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা টানা ১০দিন দায়িত্ব পালন শেষে দু’সপ্তাহ হোটেল কোয়ারেন্টাইন এবং পরবর্তী ৬ দিন বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব বলেন, আমাদেরকে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করতে হচ্ছে। জনবল কম থাকায় আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারছি না।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, টানা ১০ দিন ডিউটি করে চিকিৎসকরা যখন কোয়ারেন্টাইনে যায়, তখন তো জনবল কম হয়ে যায়। এর ফলে করোনা চিকিৎসায় তখন আমাদের বেগ পেতে হয়।
চিকিৎসক সংকট মোকাবিলায় সম্প্রতি ৩৯তম বিসিএস থেকে নিয়োগ পাওয়া দু’হাজার চিকিৎসকের মধ্যে ৭৬ জনকে পদায়ন করা হয়েছে চট্টগ্রামে। করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত এসব চিকিৎসক নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে নতুন জটিলতা।
বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ৩০ জন চিকিৎসক দিয়েছেন। তার মধ্যে ১৭ জন নারী চিকিৎসক। আবার এদের মধ্যে ১২ জন গর্ভবতী। তাদের দিয়ে তো আর করোনা চিকিৎসা করানো যাবে না।
এদিকে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের দায়িত্ব বন্টন নিয়ে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। অধিগ্রহণ করা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসক এবং ৩৫ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হলেও সেখানে রোগী ভর্তি করা হয়েছে একেবারে হাতোগোনা। আবার অন্য হাসপাতালগুলোতে রোগী বেশি থাকলেও চিকিৎসক দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ এ চিকিৎসক নেতার।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে যারা করোনা নিয়ে কাজ করবেন, সরকার তাদের কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবেন তা নিশ্চিত নয় বলে অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৩৭ জন। এর মধ্যে ১৭ জন চিকিৎসকসহ মোট সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ২শ’ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৮৫ জনের।