ফাইনালে লড়াইটা ছিল অভিজ্ঞতায় ভরপুর জেমকন খুলনা ও তারুণ্যের শক্তিতে সাফল্যের জয়গান লিখতে থাকা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের। তবে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে ৫ রানে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শিরোপা ঘরে তোলে জেমকন খুলনা।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অধিনায়কোচিত ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ১৫৫ রানের পুঁজি পায় জেমকন খুলনা। বোলারদের কৃতিত্বে জয়ের জন্য এই রানই যথেষ্ট প্রমাণিত হয়। গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম আঁটকে যায় ১৫০ রানেই।
১৫৬ রানের মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় ফাইনালের মতো চাপের ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে ভালো শুরুর প্রয়োজন ছিল। টুর্নামেন্টজুড়েই উদ্বোধনী জুটিতে দলকে দারুণ কিছু দেওয়া লিটন দাস ও সৌম্য সরকার এদিনও ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন।
আগের ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার করা মাশরাফি বিন মর্তুজার ২ ওভারের প্রথম স্পেলে ২১ রান নেন দুজনে। তবে ৩.৩ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙে দলীয় ২৬ রানে। শুভাগত হোমের বলে বোল্ড হওয়ার আগে সৌম্যের ব্যাট থেকে আসে ১২ রান।
৯ রানের ব্যবধানে বিদায় নেন অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনও (৭)। ২৩ বলে ২৩ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন দাসও। পাওয়ার প্লেতে ৩৯ রান তোলা চট্টগ্রাম ৫১ রানেই হারায় ৩ উইকেট। প্রথম ১০ ওভারে বন্দরনগরীর দলটির স্কোরবোর্ডে ৬২, জিততে হলে পরের ১০ ওভারে করতে হবে ৯৪।
হাতে ৭ উইকেট নিয়ে ওভারপ্রতি প্রায় ১০ রান করে নেওয়ার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা শামসুর রহমান ও সৈকত আলির। দু’জনে চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৩৪ বলে ৪৫ রান। ২১ বলে ২৩ রান করে শামসুর রহমান ফিরেছেন হাসান মাহমুদের বলে।
৯৬ রানে শামসুর রহমানের বিদায়ের পর দলের জয়ে প্রয়োজন ছিল ৬০ রান। সৈকত আলি ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৪৭ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ২৯ এমন সমীকরণে ১৯তম ওভার থেকে নেন ১৩ রান।
শেষ ওভারে যে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৬ রানে, তবে সদ্য বাবা হারানো পেসার শহিদুল ইসলাম হয়তো শোককে শক্তিতে পরিণত করে টানা দুই বলে ফেরান মোসাদ্দেক ও সৈকত আলিকে। ঐ ওভারে আসে ১০ রান, ৫ রানে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় মোহাম্মদ মিঠুনের চট্টগ্রাম।
আউট হওয়ার আগে ৪৫ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন সৈকত আলি। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে না পারার আক্ষেপ সঙ্গী করে মোসাদ্দেক ফিরেছেন ১৯ রানে।
তারকা সমৃদ্ধ দল হওয়া সত্বেও টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যাটিং লাইন আপ বেশ ভুগিয়েছে জেমকন খুলনাকে। তবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে ব্যাটসম্যানদের গড়ে দেওয়া ভীতে চট্টগ্রামকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে দলটি। কিন্তু ফাইনালে আগে ব্যাট করে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বড় সংগ্রহ পায়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
পাওয়ার প্লে তে প্রতিপক্ষের রানের চাকা আঁটকে রাখার পাশাপাশি দুই একটা ব্রেক থ্রু দেওয়া নিয়মিত কাজ হয়ে পড়েছিল চট্টগ্রাম স্পিনার নাহিদুল ইসলামের। ফাইনালের মত বড় ম্যাচে ইনিংসের প্রথম বলেই ফিরিয়েছেন খুলনার ওপেনার জহরুল ইসলামকে। কোয়ালিফায়ারে ৮০ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা জহরুলকে ফিরতে হয় খালি হাতে।
পাওয়ার প্লে তে নাহিদুল এনে দেন আরও একটি উইকেট। দলীয় ২১ রানে তার শিকারে পরিণত হন ইমরুল কায়েস (৮)। জহরুল-ইমরুলের বিদায়ের পর ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েও ৭ম ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনের বলে ফিরতে হয় ২০ বলে ২৫ রান করা জাকির হোসেনকে।
খুলনার প্রথম তিন উইকেটই চট্টগ্রামের স্পিনারদের দখলে। টুর্নামেন্টে চট্টগ্রাম পেসারদের আধিপত্যের কথা মনে করিয়ে দিতে দৃশ্যপটে শরিফুল ইসলাম। ক্রিজে থিতু হওয়া আরিফুল হককে (২১) ফিরিয়ে ৪ উইকেটে ৮৩ রানে পরিণত করেন খুলনাকে। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩৪ রানের জুটিতে শুভাগত হোমকে নিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখান।
১৫ রান করা শুভাগতকে মুস্তাফিজের ক্যাচ বানিয়ে এই জুটিও ভাঙেন শরিফুল। তবে অন্য প্রান্তে একাই লড়ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ১০ ওভারে ৬৩ রান তোলা খুলনার স্কোরবোর্ডে ১৫ তম ওভার শেষে উঠে ১১৪ রান। শুভাগতের বিদায়ের পর ভুল কলে ক্রিজে থিতু হওয়া মাহমুদউল্লাহর সাথে জুটি জমেনি শামীম হোসেন পাটোয়ারীর।
রানআউটে কাটা পড়ে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে ফিরতে হয় খালি হাতে। ম্যাচে মুস্তাফিজুর রহমানের একমাত্র শিকার হওয়া মাশরাফি করতে পেরেছেন ৫ রান। ২১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় শীর্ষে থাকা মুস্তাফিজ এই উইকেট দিয়ে বাকিদের সাথে দূরত্বটা আরও বাড়িয়ে নিলেন।
বাকিদের ব্যর্থতার দিনে ঢাল হয়ে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৪৮ বলে ৭০ রানের তার অধিনায়কোচিত ইনিংসে ভর করে দল পায় ৭ উইকেটে ১৫৫ রানের সংগ্রহ। ৩৯ বলে ফিফটিতে পৌঁছানো রিয়াদ হার না মানা ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৮ চার ২ ছক্কায়। সৌম্য সরকারের করা শেষ ওভারে নেন ১৭ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
জেমকন খুলনা ১৫৫/৭ (২০), জহুরুল ০, জাকির ২৫, ইমরুল ৮, আরিফুল ২১, মাহমুদউল্লাহ ৭০*, শুভাগত ১৫, শামীম ০, মাশরাফি ৫, শহিদুল ১*; নাহিদুল ৩-০-১৯-২, শরিফুল ৪-০-৩৩-২, মোসাদ্দেক ২-০-২০-১, মুস্তাফিজ ৪-০-২৪-১গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ১৫০/৬ (২০), লিটন ২৩, সৌম্য ১২, মিঠুন ৭, সৈকত ৫৩, শামসুর ২৩, মোসাদ্দেক ১৯, নাহিদুল ৬*, নাদিফ ১*; শুভাগত ২-০-৮-১, আল আমিন ৪-০-১৯-১, হাসান ৪-০-৩০-১, শহিদুল ৪-০-৩৩-২
ফলাফলঃ জেমকন খুলনা ৫ রানে জয়ী