লালদিঘী মাঠে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। ১০ অক্টোবর দিনক্ষণ ঠিক করেছে তারা। তবে মেলেনি পুলিশের অনুমতি। একই দিন একই মাঠে শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগও। তাই ঐ দিনটিকে ঘিরে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ছড়াচ্ছে উত্তাপ। সবার প্রশ্ন, কার ভাগ্যে জুটবে লালদিঘীতে সমাবেশের অনুমতি। তবে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে দুই পক্ষকেই বড় শোডাউন করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা হবে ১০ অক্টোবর। এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রায়ে তারেক রহমানের সাজা হতে পারে- এমন আশঙ্কায় মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) থেকে চট্টগ্রামে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। মাঠে নেমে বিএনপি অরাজকতা করতে পারে এমন শঙ্কা থেকে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগও। আবার দুই পক্ষের সংঘাত ঠেকাতে পুলিশও নিয়েছে প্রস্তুতি।
এ প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন জয়নিউজকে বলেন, “২১ আগস্টের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আওয়ামী লীগ সরকার নানা ধরনের অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে তারা বিএনপিকে এ ঘটনার জন্য বিভিন্ন সময়ে দায়ী করে এসেছে। মূলত বিএনপির আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসাতে চায়। তিনি বলেন, এই মামলার রায়ের দিন (১০ অক্টোবর) আমরা লালদিঘী মাঠে সমাবেশের আয়োজন করেছি। কিন্তু প্রশাসন আমাদের এখনো অনুমতি দেয়নি। সেদিন অনুমতি না পেলে ১৩ অক্টোবর আমরা লালদিঘীতে সমাবেশ করতে চাই। যদি ১০ অক্টোবর আমাদের লালদিঘীতে সমাবেশ করতে দেয়া না হয় তাহলে আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবো।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, বিএনপি-জামায়াত গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার দিন নাশকতা করতে পারে। আমরা তাই রাজপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করবো। ১০ অক্টোবর নগরীর ১৭টি স্পটে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবে। তিনি জানান, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, একে খান গেট, ফকিরহাট, সিটি গেট, ইপিজেড মোড়, সল্টগোলা, লালদিঘী মাঠ, দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়, দেওয়ানহাটসহ ১৭টি স্পটে অবস্থান করবেন নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানায়, ৮ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর নগরজুড়ে শোডাউন করতে নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ অক্টোবর লালদিঘী এলাকায় বড় জমায়েতের ‘চিন্তা-ভাবনা’ করছে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দফায় দফায় লালদিঘীতে সমাবেশ করার ঘোষণা চট্টগ্রামের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিএনপি বড় সমাবেশের ঘোষণা দিলেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ ছাড়া অতীতে তাদের সমাবেশগুলোতে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল হাতেগোণা। ফলে আলোচনায় উত্তাপ থাকলেও ১০ অক্টোবর সংঘাতময় পরিস্থিতির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে দুই দলই লালদিঘী এলাকায় শোডাউনের ঘোষণা দেওয়ায় কিছুটা ভাবতে হচ্ছে পুলিশকে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ জোন) এস এম মোস্তাইন হোসাইন বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। সংঘাত এড়াতে সকল পক্ষকে বড় সমাবেশের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এর আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। এতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।
১০ অক্টোবর এ ঘটনায় দায়ের দুই মামলার রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে।