বৈশ্বিক উষ্ণায়নের গতি রোধ করতে অন্য অনেক তৎপরতার পাশাপাশি বনাঞ্চলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সমান জরুরি। সেই জরুরি তৎপরতায় গতি আনতে মতৈক্যে পৌঁছেছেন বিশ্বনেতারা।
জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এ অংশ নেওয়া বিশ্বনেতারা গতকাল মঙ্গলবার বনভূমি রক্ষায় চুক্তি করেন।
২০৩০ সালের মধ্যে বনাঞ্চল ধ্বংস বন্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন তাঁরা। একমত হয়েছেন মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারেও।
এতে শতাধিক বিশ্বনেতা, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও বিভিন্ন কম্পানির প্রতিনিধিরা অঙ্গীকার করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। এ ছাড়া বনবাসী নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের বনাঞ্চলের রক্ষাকর্তা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়ার অঙ্গীকারও করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অঙ্গীকার বাস্তবায়নের স্বার্থে সরকারি-বেসরকারি খাতে দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল ও রাশিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ সম্প্রতি এ দুটি দেশে বন উজাড় হওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত বেশি। গতকালের চুক্তিতে স্বাক্ষর করা দেশগুলোতেই রয়েছে পৃথিবীর মোট বনাঞ্চলের ৮৫ শতাংশ। সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে—এমন বনাঞ্চলের মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন, কানাডার উত্তরাঞ্চলের বোরিয়াল বন ও কঙ্গো অববাহিকার রেইনফরেস্ট।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলা হয়। এ জন্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনা জরুরি। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এখনো কোনো দেশ বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারেনি। এরই মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বনাঞ্চল ধ্বংস বন্ধ করার বড় অঙ্গীকার করলেন বিশ্বনেতারা।
এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্য একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জলবায়ু পরিবর্তন সামাল দিতে না পারলে আমরা জীববৈচিত্র্য ও তাদের আবাসস্থলের বিপর্যয় ঠেকাতে পারব না। একইভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে এবং নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে পারব না। সুতরাং বনভূমি রক্ষা করা মানে শুধু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সঠিক পথে থাকাই নয়, আমাদের সবার জন্য আরো সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে থাকা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার স্বার্থে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে তাঁরা যতটা আন্তরিক, বন রক্ষার ব্যাপারেও তাঁরা যেন একই রকম আন্তরিক হন।
মিথেন কমাতে চুক্তি : এদিকে গতকাল মিথেন গ্যাস নিঃসরণ বিষয়েও একটি চুক্তি হয় জলবায়ু সম্মেলনে। চলতি দশকের শেষ নাগাদ মিথেন গ্যাস নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমানোর যে অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) করেছে, তাতে গতকাল ৮০টির বেশি দেশ স্বাক্ষর করেছে
জয়নিউজ/পিডি