দেশে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ব্যক্তি কোনো না কোনো ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই হার বেড়েই চলেছে। অবাক করার বিষয়, মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। এমনকি এই মানসিক রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৯২ শতাংশই নানা কারণে চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মনরোগ বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ফর মেন্টাল হেলথ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চাইল্ড এডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রির সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, বাংলাদেশে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু-কিশোর কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন।
বেকারত্ব, হতাশা, অস্থিরতা, ব্যক্তিজীবনের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, নানামুখী চাপ, অপ্রাপ্তি, লোভ ও বিচারহীনতা তরুণদের মানসিক রোগীতে পরিণত করছে বলেও এই চিকিৎসক জানান।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে বছরে গড়ে ১০ হাজার জনেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। আর দেশে গুরুতর মানসিক রোগীদের মাঝে ৪২ শতাংশই কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, ব্রেইন টিউমার, লিভার, কিডনি ও হার্টফেল অন্যতম।
এতে আরও বলা হয়, করোনাকালীন মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এমনকি করোনার প্রথম বছরেই সারাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক।
জানা গেছে, বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন। যার ৫০ শতাংশই শুরু হয় ১৪ বছর থেকে। সারাবিশ্বে মৃত্যুর এক দশমিক তিন শতাংশ হলো আত্মহত্যা। যেখানে তরুণদের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হলো মানসিক সমস্যা।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বার্ন জং রানা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন প্রমুখ।