শান্তি সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলা

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। দিনটি ছিল শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর স্রোত ছিল সমাবেশটিতে। মহাসমাবেশে রূপ নেয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের চতুর্দিক।

- Advertisement -

সমাবেশ শেষে সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে যাওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ করে বিকেল ৫টার একটু আগে সমাবেশস্থলে পৌঁছান বিরোধী দলের নেতা। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন।

- Advertisement -google news follower

বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তারপর এগিয়ে গেলেন নামার সিঁড়ির কাছে। মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড।

আর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে খই ফোটার মতো একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। কিছু বুঝে উঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড হামলার বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। রক্তগঙ্গা বইয়ে যায় এলাকাজুড়ে। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল শেখ হাসিনা।

- Advertisement -islamibank

পরিস্থিতি বুঝতে ট্রাকে অবস্থানরত নেতারা ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যাকে।

গ্রেনেডের আঘাতে পরাস্ত করতে না পেরে ওইদিন শেখ হাসিনার গাড়িতে ঘাতকরা ছুড়েছিল বৃষ্টির মতো গুলি। একেবারে পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ।

পরিকল্পিত হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে শেখ হাসিনা ফিরে এলেও ওইদিন গ্রেনেড হামলার পর সেদিন স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন শত শত মানুষ। আকস্মিক মৃত্যু আর রক্তস্রোতে লন্ডভন্ড শান্তিপ্রিয় অসংখ্য মানুষের হাত-পাসহ মানবদেহের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল।

নারকীয় হামলা প্রতিহতে সেই সময়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোটের পুলিশ বাহিনী। শত শত রক্তাক্ত-ছিন্নভিন্ন হওয়া মানুষগুলোকে উদ্ধারের পরিবর্তে পরিকল্পিতভাবে চতুর্দিক থেকে টিয়ারগ্যাস ছুড়ে নির্বিঘ্নে ঘাতকদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়। এমনকি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড উদ্ধার করা হলেও আলামত নষ্ট করতে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হামলাস্থলে থাকা সকল আলামত একে একে ধ্বংস করা হয়।

শত শত আহত যেন চিকিৎসা না পায় সেজন্যও উপরের নির্দেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, তৎকালীন পিজি হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের অলিখিত নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়েছিল। হামলার পর অগণিত আহতকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে নেওয়া হলেও মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে রাখা হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থক ড্যাবের নেতারাও চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করে। ফলে আহত বেশিরভাগ নেতাকর্মীদের সরকারি হাসপাতালের পরিবর্তে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালসহ নানা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এমনকি নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ঘটেছে ওই ভয়াল সময়ে।

২১ আগস্টের সেই রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। নারী নেত্রী আইভী রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট মারা যান। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ।

আহত হওয়া পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর অনেকেই ঘাতক গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়েই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। হাত-পা-চোখসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করে জীবনধারণ করছে।

জয়নিউজ/পিডি

 

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM